Apan Desh | আপন দেশ

ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই ইউএনও’র!

স্কুলের গাছ উধাও, মাটি পাশের খালে

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:২২, ২৮ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ২১:০০, ২৮ মার্চ ২০২৪

স্কুলের গাছ উধাও, মাটি পাশের খালে

ছবি: আপন দেশ

পাবনা সদরে বিদ্যালয়ের মাটি ও গাছ কেটে অনত্র বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য মাটি ও গাছ কাটা হয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রমি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। তবে পরিদর্শনে গিয়ে অভিযুক্ত ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন খোদ ইউএনও। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাটি কেটে পাশেরই একটি বাড়ির খাল ভরাট করা হয়েছে। ট্রলি দিয়ে ভরাটের জন্য মাটি যেভাবে ফেলা হয়েছে এখনও সেভাবেই রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আজও মাটি ফেলার কথা ছিল। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হবার পর ইউএনও আসতে পারেন জেনে বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া নির্মাণস্থলে কয়েকটি গাছ ছিল সেগুলোর তিনটি কেটে নির্মাণ কাজের জন্য খনন করা হয়েছে। তবে কেটে ফেলা ওই গাছের হদিস জানেন না কেউই।

অভিযোগ, গত ২১ মার্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পায় প্রতিষ্ঠানটি। দু’দিন পর এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি খনন শুরু করে প্রমি কনস্ট্রাকশন। কিন্তু নির্মাণ কাজে কাটা মাটি বিদ্যালয়ের কাজে লাগায়নি। বরং টাকার বিনিময়ে ওই এলাকার একটি বাড়ির খাল ভরাট করছেন ঠিকাদার।

আরও পড়ুন>> জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম পাবনায়!

এ পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ ট্রলি মাটি বিদ্যালয় থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনটি বড় গাছও বিক্রি করেছে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কাউকেই না জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন অনিয়ম করছে বলেও অভিযোগ তাদের। পরে এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকালও (২৭ মার্চ) মাটি কেটে ওই খাল ভরাট করা হয়েছে। স্থানীয় অধিকাংশই দেখেছে। স্কুলের গাছগুলোও উধাও হয়ে গেছে। অথচ ইউএনও বলছেন অভিযোগের সত্যতা নেই। এ নিয়ে আর কি বলার আছে।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু সায়েম মো. আরিফুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় থেকে ৩০০-৪০০ গজ দূরে রাস্তার সঙ্গে একটি বাড়ির খাল ভরাটের জন্য ওই মাটি স্থানান্তর করা হয়েছে। আমরা এর কিছুই জানি না। খবর পেয়ে বাধা দিলেও তারা সেটি মানতে নারাজ। পরে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও ইউএনও ম্যাডামকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। 

তিনি বলেন, বিদ্যালয়কে না জানিয়েই বনজ ও ফলজ গাছসহ বড় বড় তিনটি গাছও ঠিকাদার বিক্রি করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সম্পদ কীভাবে তারা বিক্রি করেন? এগুলো পরিষ্কার অনিয়ম। তবে ইউএনও অভিযোগ অসত্য দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। এসব অনিয়মের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে দাবি তার।

আরও পড়ুন>> ঘুষ দিলেই চাটমোহরের খাস জমি হয় ব্যক্তির

প্রধান শিক্ষিকা নারগিস আক্তার বলেন, গাছ বা মাটি কেটে বিক্রির বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা দেখিও নাই। সভাপতি ও স্থানীয়রা আমাকে জানান। ঘটনা সত্য দেখে নিষেধ করলেও তারা শোনেননি। পরে লিখিত অভিযোগ করেছি।

এসব অভিযোগ অসত্য দাবি করেছেন প্রমি কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম ঝন্টু। তিনি বলেন, মাটি কেটে বিদ্যালয়েই রাখা হয়েছে। বিক্রি করা হয়নি। গাছও বিক্রি করা হয়নি। তাহলে গাছ ও বিদ্যালয়ের মাটি পাশের বাড়ির ওই খালে কীভাবে গেছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এদিকে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান ইউএনও শামীমা সুলতানা। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, মাটি ও গাছ কাটার অভিযোগের প্রাথমিক কোনো সত্যতা পাইনি। তবে স্কুল যেহেতু শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭৩ টাকা ব্যয়ের নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতলা ভিতবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হবে। চার কক্ষের একতলা ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডার পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিহাদ এন্টারপ্রাইজ। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের হয়ে এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে প্রমি কনস্ট্রাকশন। যেটির তদারকি প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। তবে শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নৈতিকতা নিয়ে অভিযোগ ওঠায় বরাদ্দ ও নিয়মানুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

আপন দেশ/আরএন/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়