Apan Desh | আপন দেশ

দরিদ্র মজিবুর এখন হাজার কোটির টাকার মহারাজা

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৫:০৫, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

দরিদ্র মজিবুর এখন হাজার কোটির টাকার মহারাজা

ছবি: আপন দেশ

গ্রামের মানুষ তাকে চেনেন দরিদ্র কৃষক শুক্কুরের পোলা ‘মজি’ নামে। শিক্ষা সনদে উল্লেখ মজিবুর রহমান। কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। মাফিয়া শেখ হাসিনার তিন আমলেই ছিলেন পৌর মেয়রের দায়িত্বে। হাসিনার আয়না ঘরে বিএনপি নেতারা যখন বন্দিদশায় মৃত্যুর প্রহর গুনছিল তখনও বিএনপি নামধারী মজিবুর ছিলেন রাজার হালতে।

নেপথ্যে কারণ তার মাথার ওপরে ছায়া হিসেবে ছিলেন ১৯৭১ সালের ধর্ষণ মামলার আসামি ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দু’জনের মধ্যে ছিল কর্ম-অপকর্মের সুবাদে দহরম-মহরম সাপ্লাইয়ের সম্পর্ক। রাত-বিরাতে যেতেন মোজাম্মেল হকের খাসকামরা ও বাসায়। সেজন্য স্থানীয় বিএনপি নেতারা ঠাট্টা করে তাকে মোজাম্মেল ‘পুত্র’ বলে ডাকেন। আর মোজাম্মেল হকের ছায়ায় কালিয়াকৈরের সবই ছিল মজিবুরের নিয়ন্ত্রণে। টেন্ডার বাণিজ্য, ঝুট বাণিজ্য, ভুয়া প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ লোপাট, জনবল নিয়োগে অনিয়ম, সরকারি বনের জমি জবরদখল করে শিল্পকারখানায় বিক্রি। সবই করেছেন, টাকা কামিয়েছেন দুই হাতে। দেশ-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। শুধু কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় করেছেন ডুপ্লেক্স থেকে ১১ তলা বিশিষ্ট একাধিক ভবন।
আপন দেশ-এর অনুসন্ধানে আপাতত বাংলাদেশে পাওয়া গেছে- আলিশান বাড়িসহ ৮টি বহুতল ভবন। সর্বোচ্চ ১১ তলা পর্যন্ত। বিদেশেও তার সম্পদ রয়েছে। চতুর মজিবুর বেশির ভাগ সম্পদ করেছেন গৃহিণী স্ত্রী আজমেরি বেগম মুন্নির নামে। শ্যালিকা, নিকটাত্মীয় ও অনুসারীদের নামেও গড়েছেন সম্পদ। 

আরও পড়ুন<<>> সিটি ব্যাংক এমডি মুজিববাদী মাসরুর আরেফিন এখন ব্যাংকখাতের ভয়

কালের হাভাতে মজিবুর এখন স্থানীয় বিএনপি ও সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। আওয়ামী লীগ আমলে থানার ওসির কাছে বিএনপি নেতাদের নামের তালিকা পাঠাতেন। কেউ তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। তার নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে থানায় জিডি করেছিলেন পৌরসভার সাবেক এক কর্মচারী। ‘মজি বাহিনী’র নির্যাতনের ভয়ে এখনো প্রকাশ্যে মজিবুরের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। কারণ তখন ছিলেন আওয়ামী লীগারদের আস্থাভাজন এখন তিনি বিএনপি নেতা।  

স্থানীয়রা বলছেন, মজিবুর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও তার নিজের ভাগ্যের আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। অথচ যে মজিবুর একসময় মাটির ঘরে থাকতেন, দিন এনে দিন খাওয়াতেন কৃষক বাবা; তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। শুধু মজিবুরই নয় তার পিয়ন জাহাঙ্গীরেরও রয়েছে ৯টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই জমি। নিজে থাকেন পাঁচতলা বাড়িতে।   

দরিদ্র কৃষকপুত্র থেকে কোটি টাকার মেয়র

মজিবুরের পিতা শুক্কুর আলী ছিলেন দরিদ্র কৃষক। বাড়িতে মাটির তৈরি ঘরে থাকতেন। লেখাপড়া শেষে ক্যারিয়ারের শুরুতে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মজিবুর। তবে ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে জড়ান পোল্ট্রি খামারের ব্যবসায়। তাতে লাভের মুখ দেখেননি। ২০ লাখ টাকার ব্যাংক লোনে সুদে-মুলে দাঁড়ায় ৪৪ লাখে। পড়েন খেলাপির তালিকায়। পরে জমিসহ খামার বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করে। হয়ে পড়েন ছন্নছাড়া।

২০০১ সালে বিএনপির তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা ও বনেদি পরিবারের চৌধুরী তানভীর ছিদ্দিকীর সান্নিধ্যে এসে ভাগ্য খুলে যায় দরিদ্র মজিবুরের। ২০০৪ সালে কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর থেকেই মূলত তরতর করে বেড়ে উঠেন। ঘুরে যায় মজিবুরের ভাগ্যের চাকা। পৌরসভার সব ঠিকাদারি কাজে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে আসে।

উন্নয়নমূলক কাজ নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে করিয়ে সরকারি কোটি কোটি টাকা লোপাট করেন। পৌরসভার টাকায় জমি কিনে তাতে প্লট করে বিক্রির টাকা নিতেন নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। পৌর প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রভাব ধরে রাখতে কৌশল নেন। নিজের লোক দিয়ে ফের নির্বাচন স্থগিত করার জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা জটিলতা দেখিয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় পৌরসভার নির্বাচন দীর্ঘদিন বন্ধ রেখে একক আধিপত্যে পৌরসভার কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেন।

ছবিতে: সাবেত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের সঙ্গে খাবার টেবিলে এবং অনুষ্ঠানে ডানপাশে সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান।

২০১১ সালের মতো ২০২২ সালেও হাত মেলান মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। অগ্নিমূর্তিতে রূপ নেন বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। টানা ক্ষমতায় থাকায় পৌর এলাকায় নামে বেনামে শত শত বিঘা জমি কিনেন তিনি। তার এসব কেনা জমি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। সরকারি বনের জায়গাতেও কুনজর পড়ে তার। দখল করে পরবর্তীতে সে জমি শিল্পকারখানার মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মাফিয়া শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে একই পথ ধরেন মোজাম্মেল হক। মন্ত্রীর শূন্যস্থান পূরণে নামেন মজিবুর। পুরনো অনুসারীদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঝুট ব্যবসা।

নুন আনতে পান্তা ফুরানো শুক্কুর আলীর ছেলে মজিবুর রহমানের চোখ এখন জাতীয় সংসদের দিকে। হাতে চাইছেন জিয়াউর রহমানের ধানের শীষ। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। নেতার বাসার বাজার থেকে যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন মজিবুর। বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডে থাকেন-এমন এক নেতার ‘খাসলোক’ বনে গেছেন আ ক ম মোজাম্মেলের এই লেসপেন্সার মজিবুর। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ওই নেতার মেয়েকে উপহার দিয়েছেন ফ্ল্যাটও।

মজিবুরের ছেলে শাহরিয়ার আতিকুর সৌরভ থাকেন কানাডায় আর মেয়ে মাহফুজা আন্জুম মুন থাকেন আমেরিকায়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যেমনটি জানিয়েছিলেন- জনৈক ব্যক্তি ছেলের এক সেমিস্টারের জন্য বিদেশে পাঠিয়েছেন মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। মজিবুরের বেলায়ও কমবেশি তেমনই ঘটেছে। অনুসারীদের কাছে দম্ভ করে ধনকুবের মজিবুর রহমান বলছেন, ধানের শীষের মনোনয়ন কিনতে যদি ৫০০ কোটি টাকা লাগে তাতে রাজি তিনি।       

মজিবুরের সম্পদ ও দুর্নীতির ‘দুর্গ

সম্পদের ভারেই মজিবুর এখন কালিয়াকৈরের মহারাজা। সাদাপাঞ্জাবী, সাদা পাজামা পরা, ক্লিন সেভধারী কালের মজি এখন কালিয়াকৈরের ‘ভূমিপতি’। বিভিন্ন স্থানে আটটি বহুতল ভবন ও দৃষ্টিনন্দন বাড়ি করেছেন এ ধনকুবের। বছরে-মাসে কিনছেন জমি, ফ্ল্যাট-বাড়ি। ব্যালেন্স আছে একাধিক ব্যাংকে। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার নামে পাচার করেছেন শতকোটি টাকা। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রী, স্বজন, শ্যালিকা, মামাত ভাইসহ নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদ। এরমধ্যে কালিয়াকৈর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পিরেরটেকিতে মজিবুর দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িতে পারিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। এছাড়া কালিয়াকৈর পৌরসভার সফিপুর বাজার সংলগ্ন কৃষি ব্যাংকের উত্তর পাশে ৯তলা ভবন রয়েছে মজিবুরের। পৌরসভার চান্দরা হরিণহাটি জামে মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে তার ৭তলা ভবন। এছাড়া হরিণহাটি মসজিদের সঙ্গে লাগোয়া ৫তলা আরেকটি ভবন রয়েছে তার। চান্দরা পল্লীবিদ্যুৎ লিভাটী ফ্যাক্টরির সঙ্গে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ৫তলা বাড়ি। যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকারও ওপরে। এছাড়াও কালিয়াকৈর পৌরসভার লতিফপুরের থানার পাশে এস.টি টাওয়ার নামের ১১তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছেন। সেই বহুতল ভবনটির মালিকও মজিবুর। ভবনটির আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা।

কালিয়াকৈর বাজারে ৫তলা সোনালী ব্যাংক ভবনটির মালিক মজিবুর। কালিয়াকৈর বাজার মেইন রোডের সঙ্গে রাবেয়া সখিনা ক্লিনিকের দক্ষিণপাশে ৬তলা আরেকটি ভবন রয়েছে তার। বছর তিনেক আগে ওই ভবনের সঙ্গে দেড় বিঘা জমি কিনেন ১৫ কোটি টাকায়। এছাড়া রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসে ৪৭৯ নম্বর ভবনে ৩২০০ স্কয়ার ফিটের আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া তার ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করেন আমেরিকা-কানাডায়। সেখানেও বাড়ি কিনেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

এদিকে শুধু বহুতল ভবন আর বাড়ি নয় কিনেছেন শ’ শ’ বিঘা জমি। এর মধ্যে কালিয়াকৈর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের গোয়ালবাথান মৌজায় হাইটেক মর্ডান টাউন নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। ওই প্রকল্পে তার কয়েক হাজার শতাংশেরও বেশি জমি রয়েছে। এছাড়া কালিয়াকৈর পৌরসভার বক্তারপুর এলাকায় সরকারি বনের জায়গার ভিতরে মেয়রের রয়েছে ২৫০ শতাংশ জমি। একই এলাকায় কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল সংলগ্ন রেললাইনের পাশে রয়েছে ১১০ শতাংশ জমি। এছাড়া পৌরসভার জমিদারবাড়ীর পাশে শ্রীফলতলী ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পাশে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে শ্রীফলতলী মৌজায় মেয়রের আস্থাভাজন মো. আকরাম আলী গংয়ের নামে ১৭৪ জমি রয়েছে এ মেয়রের। যার এস.এ নং-১১, আর.এস নং- ২৩০, এস.এ নং-২০ ও আর.এস নং-৮১,।

পৌরসভার ছোট লতিফপুর সোহেল মিয়ার বিল্ডিংয়ের সঙ্গে রয়েছে ১৫০ শতাংশ জমি, একই এলাকায় লতিফপুর বাগানবাড়ীর সঙ্গে রয়েছে তার ১৫০ শতাংশ জমি এবং হাসপাতালের পেছনে রয়েছে ৫৫ শতাংশ জমি। এছাড়া কালিয়াকৈর পৌরসভার রেললাইনের সঙ্গে লাগোয়া ৩৫০ শতাংশ জমি রয়েছে মুজিবুরের। এছাড়া চান্দরা সাভার-টাঙ্গাইল বাইপাসের সঙ্গে রয়েছে ১৫০ শতাংশ জমি। শুধু নিজের নামে নয়, স্ত্রী আজমেরী বেগম মুন্নি নামে বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশত একর জমি কিনেছেন তিনি। তার অধিকাংশ সম্পদ কিনেছেন স্ত্রী আজমেরি বেগম ও খালাতো ভাই পরিচয় দেয়া আকরামের নামে।  

মজিবুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

টানা দীর্ঘসময় পৌরসভার দায়িত্বে থাকায় একক টেন্ডার বাণিজ্য, ভুয়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার নামে প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি টাকা লোপাট, পৌরসভায় জনবল নিয়োগে অনিয়ম, পৌর এলাকায় পরিবহন খাত থেকে টোল আদায়, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জবরদখল থেকে শুরু করে সম্পদের পাহাড় গড়েন মজিবুর। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যহার করে সাধারণ মানুষের জায়গা জবরদখল, খাস ও বনের জমি জবরদখল বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে মজিবুরের বিরুদ্ধে। 

আওয়ামী লীগের আমলে কালিয়াকৈর থানার ‘ছায়া ওসি’ ছিলেন মজিবুর। ডিবি হারুন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর মজিবুরের দাপট আরও বাড়ে। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য তালিকা পাঠাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতি তালিকার সঙ্গে লাখ টাকার খামও পাঠাতেন তিনি। মজিবুরের তালিকামতেই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হতো বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। ক্রসফায়ারের ভয়-ভীতি দেখাতেন, অপহরণের মতো ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন হারুন-মজিবুররা। শুধু বিএনপি নয় জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে বাণিজ্য করেছেন মজিবুর। এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলা জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা।

আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের তদন্তে দুদক: ২১শ’ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন, ৭১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ-পাচার

কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, মজিবুর কবে বিএনপি করেছে আমার জানা নেই। তবে আওয়ামী লীগের আমলে কালিয়াকৈর থানার ওসির কাছে মজিবুরের গুরুত্ব ছিল অনেক। মজিবুর যেভাবে নির্দেশনা দিতেন তাই করতেন ওসি।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার আমলে কালিয়াকৈরে ‘আমরা বিএনপি করি’ এ শব্দটিও উচ্চারণ করতে পারতাম না, সেখানে টানা দুইবার মেয়র হয়েছেন মজিবুর। আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে আঁতাত করেই মেয়র হয়েছেন-এটা সবাই জানে। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে শত শত মামলা, সম্পদ-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে চলে গেছে, তখন মজিবুরের বিরুদ্ধে মামলা তো দুরের কথা থানায় দ্বিতীয় জিডিও হয়নি। আর কিভাবে তিনি এত টাকার মালিক হয়েছেন সেটাও অবিশ্বাস্য। 

দুদকের তলব ও প্রশাসনিক নীরবতা

স্ত্রী-সন্তান ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র মজিবুর রহমানকে তলব করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১০ মাস আগে ৫ জানুয়ারি সকাল ১০টায় তার স্থাবর সম্পদের ইনকাম ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ সব কাগজপত্র নিয়ে তাকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। মজিবুরের নিজের নামে, স্ত্রী সন্তান, ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নামে, বাড়ি, দোকানপাট, মার্কেট, জমি, প্লট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পদের উৎস কোথায় তার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বর্ণিত অভিযোগ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন-বলে চিঠি দিয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান দুদকে এসেছিলেন বটে। তবে আটকা পড়তে নয়; দায়মুক্তি পেতে। চৌকস মজিবুর দাওয়াত দিয়ে দুদক, এনবিআর কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জন করিয়েছেন গাজীপুরের সোহাগপল্লীতে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে প্রথম দফায় তিনি বলেন, পরে কল করুন। দ্বিতীয় দফায় ফোন ধরে প্রশ্ন করে কালিয়াকৈরের সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান বলামাত্রই কল কেটে দেন।

দরিদ্র কৃষকপুত্র থেকে কোটিপতি সাবেক মেয়র- মজিবুর রহমান কালিয়াকৈরের রাজনীতিতে এক ‘অদম্য সাম্রাজ্যের’ প্রতীক। বিএনপির পতাকা হাতে নিয়ে আওয়ামী প্রভাবের আশ্রয়ে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির দুর্গ। দুদকের তলব এসেছে, তদন্ত নাকি চলছে- কিন্তু মাঠে এখনো তার নাম শুনলেই স্থানীয়দের মুখে একটাই প্রতিক্রিয়া- ‘মজিবুর মানে ভয়, আর সেই ভয়েই টিকে আছে তার সাম্রাজ্য।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সাবেক মেয়র মজিবুর রহমানকে মোবাইলে (নম্বর-০১৭১৩XXX০৩৪) কল করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। একই নম্বরে হোয়াট্স অ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি। 

পরের পর্বে পড়ুন: (বিএনপির শীর্ষ নেতাকে মজিবুরের উপঠৌকন এবং এসপি হারুন (ডিব) ও মজিবুরের অপহরণসহ যতকর্ম)

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়