নজরুল ইসলাম আজাদ
নেই কোনো অস্তিত্ব, আছে শুধু একটি সাইনবোর্ড। যাতে লেখা মেসার্স এস অ্যান্ড জে স্টিল। বেসিক ব্যাংকে যখন হরিলুট চলছিল, সে দৌড়ে শামিল হয়েছিলেন বিএনপির নজরুল ইসলাম আজাদ।
বেসিক ব্যাংকের সেই আব্দুল হাই বাচ্চুর সঙ্গে মিলেমিশে বেহদিস ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলেই ৪০ কোটি টাকা লুট করেছেন। ওই টাকা সুদসহ দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি টাকায়। কথিত ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সরেজমিনে গিয়ে তার কোনো হদিস মিলেনি।
২০১৩ সালের মার্চে নেয়া এ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি বলে জানা গেছে। ভুয়া দলিল, ভুয়া রেকর্ড, ভুয়া নামজারি এবং সম্পত্তির অতি মূল্যায়নের মতো বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তার গঠনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এ বিপুল অঙ্কের ঋণ নেয়। ঋণের জন্য বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখায় আবেদন করার মাত্র ২৭ দিনের মধ্যে ব্যাংকের বোর্ড এ অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে এক বছর মেয়াদী ৪০ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ দেয়।
এ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং পার্টনার হলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে মনোনীত খসড়া প্রার্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঋণ নেয়ার জন্য যে জমি বন্ধক রাখা হয়েছিল, সে জমির প্রকৃত মালিক নন। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে মিসেস লতিফা সুলতানাকে (৭৯) জমির মালিক দেখানো হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে তার নামে ভুয়া রেকর্ড তৈরি ও ভুয়া নামজারি করা হয়েছে। অন্যদিকে, জমিটির প্রকৃত মালিক মিসেস সাহানা ইয়াসমিন এ ভুয়া রেকর্ড ও নামজারির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে 'ল্যান্ড সার্ভে টার্বিউনাল', ঢাকা মহানগর আদালতে মামলা করেন (মিস কেস নং-৮৩/২০১৩)। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে সাহানা ইয়াসমিন ওই জমিটি মহানগর ভূ-সম্পত্তি জরিপের রেকর্ডভুক্ত করার জন্য ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারে রায় পান।
আরও পড়ুন<<>> দরিদ্র মজিবুর এখন হাজার কোটির টাকার মহারাজা
সহকারি কমিশনার (ভূমি) ধানমন্ডি রাজস্ব সার্কেল সূত্রে জানা যায়, ওই রায়ের ফলে পূর্বে রেকর্ডভুক্ত লতিফা সুলতানা ও তার পূর্বসূরিদের নামে করা ভুয়া রেকর্ড বাতিল হয়ে যায়। তাদের নামজারি পর্চাও বাতিল হয়। কিন্তু জমির প্রকৃত মালিকের মামলা দায়ের করা, রায় পাওয়া এবং নামজারি সংশোধনের মধ্যবর্তী চার বছরের (২০০৯-২০১৩) ফাঁকেই নজরুল ইসলাম আজাদ সব অপকর্ম সাধন করে ফেলে। জালিয়াতির মাধ্যমে ওই জমি আলোচিত সেই বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখার কাছে বন্ধক রেখে ৪০ কোটি টাকা ঋণ বাগিয়ে নেন।
এ ছাড়াও, ঋণ নেয়ার জন্য অপর একটি জমি বন্ধক দেয়া হয় যার মালিক সুরুজ আলী (৮৮), যা ভূ-সম্পত্তি জলাভূমিতে (বিল) অবস্থিত। সাব-কবলা দলিলে ওই জমির পরিমাণ ৪৫ শতাংশ থাকলেও, বন্ধকদাতা ৫২ শতাংশ জমি বন্ধক দেয়া হয়। অতি মূল্যায়নের মাধ্যমে জমিটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
ঋণ অনুমোদন নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং পার্টনার নজরুল ইসলাম আজাদ তৎকালীন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করে এ ঋণ অনুমোদন নেয়। আব্দুল হাই বাচ্চুসহ তার সাঙ্গদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে এখনো অধরা নজরুল ইসলাম আজাদ। বাচ্চু পলাতক।
বর্তমানে এ ঋণটি ক্ষতিগ্রস্ত (শ্রেণিভুক্ত) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত মামলা করা হয়েছে।
আড়াইহাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নজরুল ইসলাম আজাদকে নিয়ে সংশয়, সন্দেহ রয়েছে। ঋণখেলাপী এ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কি শেষ বেলায় নির্বাচন কমিশনের জালে আটকে যেতে পারে। আর সে বেলায় লাভবান হতে পারে এ আসনের জামায়াত প্রার্থী।
এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম আজাদের বক্তব্য নিতে দফায় দফায় কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তাতেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































