
বাংলা অ্যাকাডেমিতে বক্তব্য দিচ্ছেন রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেটে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে সত্য কথনের যাত্রা শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষমতায়নের চিন্তার সঙ্গে আপোষকামী এবং লেজুড়ভিত্তিক বুদ্ধিবাদীতা বাদ দিয়ে মানুষের পক্ষে সত্যতা ও ন্যায়ের পক্ষে মানসিক উন্নতির প্রেক্ষাপট রচনা করতে হবে। যা জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করেই গড়ে তুলতে হবে।
শুক্রবার (০১ আগস্ট) বিকেলে বাংলা অ্যাকাডেমির সবুজ চত্বরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ৯০ ও ২৪ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
দীর্ঘ দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে ক্ষমতায়নের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার যে ধারা তৈরি হয়েছিল, সে ধারার পরিবর্তন, সত্যকথন এবং সত্যিকারের ইতিহাস তুলে ধরবার প্রয়াশসে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমাদের ইতিহাসে অনেক গৌরবময় ও অনেক মহিমান্বিত ঘটনা রয়েছে, যা যথাসময়ে প্রকাশিত হয় না। আমাদের এ উপমহাদেশে বর্তমানে রাজনীতির এমন একটা সময় যাচ্ছে- যেখানে সত্য কথা বলা, ইতিহাসের সত্য ঘটনা বই হিসেবে প্রকাশ করা এবং পাঠ করা একটি দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা একটি বিষময় সময় পার করছি। পুরো উপমহাদেশজুড়েই সেটা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে যদি এ ধরনের উদ্যোগ থাকে যে ঘটে যাওয়া সময় ও দিনগুলো নিয়ে সত্য কথার উপর ভিত্তি করে বই রচিত করে প্রকাশ করা হয়। আমি মনে করি, তারাই স্বার্থক মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবে আমাদের দেশে, আমাদের সমাজে।
আরওপড়ুন<<>>‘দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি’
জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য অনেক গভীর মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ১৬ বছর আমরা যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, আমাদের যে নিপীড়ন ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে, বারবার মামলা গ্রেফতার, রিমান্ড, নির্যাতন; এই সকল সময় কে ধারণ করে যে পটভূমি রচিত হয়েছে তার মধ্য দিয়েই এদেশের মানুষ জুলাই বিপ্লবের সূচনা করেছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ চেয়েছে, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে দেশ পরিচালিত হবে। একজন মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ভিত্তি করে এ দেশ পরিচালিত হতে পারে না। এদেশের সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে। সে জনগণকে বঞ্চিত করে, অপমানিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের যে ভয়ঙ্কর দুঃশাসন আমরা পার করে এসেছি সে ইতিহাস ভুলবার নয়। তাই এ সময়ের ঘটনাগুলোকে নিয়ে সত্য কথন এবং তা সংরক্ষিত করে প্রকাশ করতে হবে।
রিজভী বলেন, আজকের সভায় উপস্থিত বুদ্ধিজীবী মননশীল ও সত্য কথনের মানুষদের এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে একটি শুদ্ধ সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারব। আর এ সঠিক ইতিহাস জেনে যে প্রজন্ম গড়ে উঠবে তাদের চেতনাই হবে দেশ গড়ার চেতনা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মিথ্যা ও বানোয়াট প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে, অপপ্রচার, মিথ্যাচার প্রচার করে জনগণের চিন্তাধারা যে পরিবর্তন করা যায় না তার প্রমাণই হলো জুলাই অভ্যুত্থান। একটা পর্যায়ে পারিবারিক সীমানা, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সীমানা অতিক্রম করে নির্দ্বিধায় রাজপথে নেমে এসে জীবন উৎসর্গ করেছে স্বৈরাচারী সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এক অনন্য বীরত্বের অসাধারণ উদাহরণ তৈরি করেছে এদেশের তরুণ সমাজ, ছাত্র সমাজ, এ এক বিরল ইতিহাস।
শেখ হাসিনাও এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা জীবন-মরণ প্রতিজ্ঞা করে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে রাজপথে থেকেছে। এ বিষয়গুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তুলে ধরতে হবে আগামী প্রজন্মের সামনে।
রুহুল কবির রিজভি তার বক্তৃতার শেষে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটে যাওয়া ঘটনাক্রম এবং দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্যায়, নির্যাতনের কথাগুলো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবার প্রয়োজন রয়েছে। মিথ্যাচার- অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য-ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করতে হবে প্রকাশনার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের সততা তুলে ধরার মত গুরু দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।