Apan Desh | আপন দেশ

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন: প্রাণ গেল চারজনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৬ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১০:১৩, ৬ জানুয়ারি ২০২৪

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন: প্রাণ গেল চারজনের

ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে চলন্ত ট্রেনটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যশোরের বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় ওই ট্রেনে আগুন দেয়া হয়। ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ এলাকায় থামানো হয়। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৯টা ৫ মিনিটে খবর পেয়ে তাদের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে শুরু করে। তারা ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত পৌনে ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন জানান, আগুনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে গত ২৮ অক্টোবরের পর ট্রেনে আগুন ও নাশকতার ঘটনায় মোট নয়জনের মৃত্যু হলো। আগুনের ঘটনায় সাত সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। শুক্রবার রাতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা খান বিষয়টি জানান। তিনি জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী মো. সৌমিক শাওন কবিরকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ঘটনায় মধ্যরাতে ঢাকার জুরাইন রেললাইন সংলগ্ন বস্তি থেকে ককটেল ও পেট্রল বোমাসহ তিনজনকে আটকের কথা জানিয়েছে র‌্যাব। এ ছাড়া ওই ট্রেনের দুই যাত্রীকে সন্দেহভাজন হিসেবে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ট্রেনে আগুন লাগার পর জুরাইন বস্তিতে কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তির আনাগোনার তথ্য পায় আমাদের গোয়েন্দারা। এরপর র‌্যাব-৩ অভিযান চালিয়ে আলমগীর, রাব্বী ও কাশেম নামের তিনজনকে আটক করে। যেখান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে যেখান থেকে ট্রেনে সহজে অগ্নিসংযোগ করা সম্ভব। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, তারা এখানে বসে বিপুল পরিমাণে ককটেল ও পেট্রল বোমা বানাচ্ছিলেন তারা। সেখানে ৩০টি তৈরি ককটেল ও ২৮টি পেট্রল বোমা পাওয়া গেছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আটক ব্যক্তিদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ও তারা মাদকাসক্তও বলে মনে হয়। তারা আয়নাল নামের এক ব্যক্তির নাম বলেছে। তবে তার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি। তবে আইনাল তাদের দিয়ে ককটেল ও পেট্রল বোমা বানাচ্ছিলেন এবং এর আগেও তাদের কাছ থেকে বোমা বানিয়ে নিয়েছেন।

এদিকে পুলিশ জানায়, যে দুই যাত্রীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে তারা কুষ্টিয়া থেকে উঠেছেন। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। এই দুই যাত্রী কুষ্টিয়া থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেনাপোল থেকে বেলা দেড়টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এটি রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা, তবে পথে ২৫ মিনিট দেরি হয়। ট্রেনে কতজন যাত্রী ছিল, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি রেলের কর্মকর্তারা।

গোপীবাগের বাসিন্দা রাসেল হোসেন জানান, রেললাইনের কাছেই তার বাসা। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ মানুষের চিৎকার শুনে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে দেখেন ট্রেনটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। অনেকে তাড়াহুড়া করে ট্রেন থেকে নামছেন। তিনি জানান, স্থানীয় অনেকে উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন। তিনিও উদ্ধারকাজে যোগ দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ট্রেনের ভেতরে যখন আগুন জ্বলছিল, তখন কেউ কেউ জানালা দিয়ে তাদের বের করার জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন, কিন্তু উত্তাপ এত বেশি ছিল যে ট্রেনের কাছে কেউ যেতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে পানি ছিটানো শুরু করে। দগ্ধ অথবা নামতে গিয়ে আহত যাত্রীদের আশপাশের হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়।

এ ঘটনায় বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন রুটের ২২টি ট্রেন দুইদিন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই ২ দিন হচ্ছে- নির্বাচনের আগের দিন ৬ জানুয়ারি (আজ) এবং নির্বাচনের দিন ৭ জানুয়ারি (আগামীকাল)। শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাত পৌনে একটার দিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম মহাব্যবস্থাপকের ফেসবুক পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়।।

পোস্টে বলা হয়, ‘সম্মানিত যাত্রী সাধারণের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অনিবার্য কারণবশত আগামী ৬ জানুয়ারি এবং ৭ জানুয়ারি বেনাপোল এক্সপ্রেস ও ঢালারচর এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে মহানন্দা (আপ/ডাউন), রকেট (আপ/গাউন), পদ্মরাগ (২১ / ২২), রংপুর শাটল (৯৭ / ৯৮), ঢাকা কমিউটার (৯৯), রাজশাহী কমিউটার (৫ /৬) ও বগুড়া কমিউটার (৫ /৬) আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারি বন্ধ থাকবে।’

এ ছাড়া চিলমারী কমিউটার এবং লোকাল (৪৬২ / ৪৫৫ / ৪৫৬ / ৪৬১) ৬ জানুয়ারি (আংশিক) ও ৭ জানুয়ারি পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুরোপুরি পুড়ে যায়। পরে একটি কোচ থেকে মা, শিশুসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গোপীবাগের ঘটনাসহ গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে হরতাল-অবরোধের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচটি ট্রেনে আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়া রেললাইন কেটে ফেলার একটি ঘটনা ঘটানো হয়। আগে এসব ঘটনায় মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এসব ঘটনার বাইরে রেললাইনে আরও ১৯টি অগ্নিসংযোগ এবং আটটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

রেলকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনার পর বিভিন্ন পথে আটটি ট্রেনের চলাচল স্থগিত করা হয় এবং দুটি ট্রেনের চলাচল সীমিত করা হয়। রেলপথে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়। তার মধ্যেই আগুনের এই ঘটনা ঘটল।

রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি সর্বশেষ ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়েছিল। ৮টা ৫৫ মিনিটের সময় সায়েদাবাদ এলাকা অতিক্রম করার সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টিজি পার্টি (ট্রেন গার্ড) আগুন লাগার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তারাই চেইন টেনে ট্রেন থামান। ঘটনাটি এখন পর্যন্ত নাশকতাই মনে হচ্ছে। ট্রেনটিতে সিসিটিভি ক্যামেরা (ক্লোজড সার্কিট) নেই।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়