
ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহুল আলোচিত বৈঠক ঘিরে বিশ্ববাসীর চোখ ছিল আলাস্কায়। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকেও ইউক্রেইন যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়নি। দীর্ঘ আলোচনার পরও অচলাবস্থা কাটেনি, বরং পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বৈঠকের পর ক্লান্ত ও অস্বস্তিকর অবস্থায় ক্যামেরার সামনে হাজির হন ট্রাম্প। অপরদিকে পুতিন ছিলেন আত্মবিশ্বাসী, যিনি আবারও যুদ্ধের “মূল কারণ” প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চলমান প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে কিংবা গোপন তৎপরতায় ব্যাঘাত ঘটালে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি কিয়েভ ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিতে চাইছেন। তবে তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে—কোনো তাৎপর্যপূর্ণ সমঝোতা হয়নি। দুই নেতার মধ্যে এমনকি একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজও হয়নি, আর বৈঠক শেষে দ্রুত বিমানে চড়ে ওয়াশিংটন ত্যাগ করেন পুতিন।
আলোচনার সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলো—যেমন কোন ভূমি দখল রাখতে চান পুতিন কিংবা যুদ্ধবিরতির শর্ত—এখনও অমীমাংসিত। ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন, “বড় কিছু বিষয় এখনো রয়ে গেছে।” এর অর্থ আলোচনায় অগ্রগতি খুব সীমিত।
তবে পুতিন দুইভাবে লাভবান হয়েছেন। প্রথমত, মার্কিন মাটিতে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং প্রেসিডেন্টের গাড়ি “দ্য বিস্ট”-এ চড়ার সুযোগ তার ভাবমূর্তিকে নতুন করে বৈধতা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, সময় অর্জন করেছেন তিনি। কারণ, ফ্রন্টলাইনে রুশ সেনাদের জন্য সামনের মাসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সময় কাজে লাগিয়ে মস্কো সামরিক সুবিধা পেতে পারে।
ট্রাম্প অবশ্য আশাবাদী সুরে বলেছেন, শিগগিরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে পুতিনের বৈঠক আয়োজন করা হবে। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এখন কাজটা আসলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির। তাদের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হবে, আর সম্ভবত আমিও থাকব।” যদিও কী কী ইস্যুতে অচলাবস্থা রয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি তিনি।
বৈঠককে “সফল” হিসেবে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, আলোচনার পরিবেশ ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক। তার ভাষায়, আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া দারুণ হয়েছে, ১০-এর মধ্যে ১০ দেব।
তবে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল বৈঠককে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে অভিহিত করেন। সিএনএনকে তিনি বলেন, কোনো ফলাফল নেই। এটি নিছক সময় নষ্ট। পুতিন যখন ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছেন, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলছেন—এটা অগ্রহণযোগ্য।
অন্যদিকে রুশ অর্থনৈতিক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেছেন, আলাস্কা সম্মেলন ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক অগ্রসর হবে। তার দাবি, বহু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে পুতিন এক ঘণ্টার মধ্যেই দেশে ফেরার উদ্দেশে বিমানে ওঠেন। তবে তার আগে আলাস্কার ফোর্ট রিচার্ডসন স্মৃতিসৌধে সোভিয়েত সেনাদের কবরের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে সরঞ্জাম আনা-নেয়ার সময় যেসব পাইলট ও নাবিক নিহত হয়েছিলেন, তাদের স্মরণে এ কবরস্থান তৈরি করা হয়েছিল।
সর্বশেষে, ট্রাম্পও স্থানীয় সময় বিকেল চারটা ২০ মিনিটে এয়ার ফোর্স ওয়ানযোগে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে আলাস্কা ত্যাগ করেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা স্থায়ী এ সফরে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি। ইউক্রেনের কাছে পরিস্থিতি আগের মতোই ভয়াবহ রয়ে গেল—না হঠাৎ কোনো বিপর্যয়, না আশার আলো।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।