ছবি : আপন দেশ
অগ্রহায়নের তিন ভাগের দুই ভাগ সময় বিদায় নিয়েছে। প্রকৃতিতে বেড়ে গেছে শীতের আনাগোনা। শীতকালীন নানা জাতের সবজিতে ভরপুর রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো। প্রতিদিনই বাড়ছে সবজির সরবরাহ। কিন্তু দাম রয়ে গেছে সে আগের মতই। দু-একটির দাম সামান্য কমলেও অধিকাংশ সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা’র মত নতুন অস্বস্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি।
হুট করেই ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে নতুন মৌসুম শুরুর আগ মুহূর্তে পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছেন তারা। রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩৮ থেকে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে এ পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৫-১৬০ টাকা কেজিতে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতাদের দাবি, গত অক্টোবরের অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে সারাদেশে শীতকালীন সবজির উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক এলাকায় সবজির ক্ষেতও নষ্ট হয়েছে। ফলে স্থানীয় পর্যায়েও দাম চড়া।
যদিও বাজার এখন শীতের বিভিন্ন সবজিতে ভরপুর- শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, টমেটো, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, পালং শাক, লাউ, মুলা- সবই পাওয়া যাচ্ছে।
এদিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে দর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহের মতো বরবটি, বেগুন ও করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে ঢ্যাঁড়শ ও পটোলের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। কাঁচা টমেটো ৬০ থেকে ৭০, দেশি পাকা টমেটো ১০০, আমদানি করা টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় ফুল ও বাঁধাকপির দর ১০ টাকা কমেছে। মাঝারি আকারের প্রতি পিস ফুল ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
কাঁচামরিচের দাম আরও কমেছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে মরিচের কেজি ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। দাম অনেকটা কমে গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে গতকাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে।
বাজারে নতুন আলু এলেও দাম চড়া। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। একই সঙ্গে পুরোনো আলুর দর বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে চার টাকার মতো। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৮ টাকায়।
আরও পড়ুন<<>>মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে শীতেও সবজির বাজারে স্বস্তি নেই
বাজারে আসা ক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, শীতের সবজি বাজারে এসেছে বেশ কয়েক সপ্তাহ হলো। সাধারণত এ সময় দামের স্বস্তি পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর উল্টো দাম আরও বাড়ছে। পরিবারের বাজার সামলানো এখন খুব কঠিন।
এদিকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
গত সপ্তাহে সরকারের তরফে বলা হয়, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত আছে। নতুন পেঁয়াজও শিগগিরই বাজারে চলে আসবে। তাই কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। সরকারের এমন পদক্ষেপের সুযোগ নিচ্ছেন মজুতদার ব্যবসায়ীরা। ফলে ফের দাম বাড়ছে।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩৮ থেকে ১৪৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে এ পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায় ১৬০ টাকা কেজিতে। বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ না এলেও পাতাযুক্ত পেঁয়াজ এসেছে। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
সবজি, তেল ও পেঁয়াজের দাম চড়া হলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল ডিম-মুরগির দাম। ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। যদিও পাড়া-মহল্লায় ১২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুরগির বাজারও গত সপ্তাহের মতো স্থির রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৭০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ-মাংসসহ অন্য নিত্যপণ্যের বাজার আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে।
অন্যদিকে, দুদিন ধরেই সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে বাজারে। কারণ ব্যবসায়ীরা সরকারের অনুমোদন ছাড়াই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছেন ৯ টাকা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতলের দাম ৪৩ টাকা এবং দুই লিটারের বোতলের দাম বাড়িয়েছেন ১৮ টাকা।
তবে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, সরকারের অনুমতি ছাড়াই ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়াতে পারেন না। এটা আইনের ব্যত্যয়। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































