ছবি : আপন দেশ
দীর্ঘ দিন ধরে কাঁচাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতদিন ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি-বন্যাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে সব ধরনের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো। বেড়েছে সরবরাহও, তবুও আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি। শীত মানেই সস্তা দামের আশ্বাস, কিন্তু বাস্তবতা- পুরোপুরি উল্টো। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, শালগম, মুলাসহ অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আয় না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাজার কিংবা, মহল্লা, দামের তারতম্য নিয়েও বেজায় অখুশি ক্রেতারা। দামের উত্তাপে ভোক্তার জন্য রাজধানীর বাজারের সকালটা শুরু হচ্ছে একরাশ হতাশা নিয়ে। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে শীতের নতুন সবজি উঠলেও দাম পড়তির লক্ষণ নেই। ক্রেতারা কিনছেন কম, মুখে হতাশার ছাপ। তাদের অভিযোগ, শীতকালীন সবজির দাম অনেক চড়া। দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই বাজারে। সবজি কিনেই বাজারের সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এদিন সকালে রাজধানীর মুগদা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়— প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০-৬০ টাকা, প্রতি কেজি শিম ও বেগুন ১০০-১২০ টাকা, মুলা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত শীতের শুরুতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা, শিম ৪০-৬০ টাকা, মুলা ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
বর্তমানে প্রতি কেজি টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ, করলা ও বরবটি ১০০-১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০-৮০ টাকা, পটোল ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নতুন আসা মিষ্টি কুমড়া প্রতিটি ৮০-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে। দাম চড়া নানা ধরনের শাকেরও। প্রতি আঁটি শাক কিনতে কমপক্ষে ২০ টাকা খরচ হচ্ছে। যদিও শীতের সময় ১০-১৫ টাকার মধ্যেই বেশিরভাগ শাক বিক্রি হয়।
সবজি ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, পাইকারি পর্যায়ে সবজির দর বেড়েছে। এ কারণে খুচরায় দাম বাড়তি। তবে আড়তদার ইদ্রিস আলি বলেন, এখন উৎপাদন এলাকায় সবজির দাম বেশি। নতুন সবজির ভালো দাম পাচ্ছে কৃষক। এ জন্য ঢাকায় দাম বাড়ছে। তার ভাষ্য, গত মাসে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে কিছু গাছ মরে গেছে। কৃষক তা পুষিয়ে নিচ্ছে।
আরও পড়ুন<<>>সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি শীতকালীন সবজির
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সবজির দাম না কমার সবচেয়ে বড় কারণ মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। কৃষকের ক্ষেত থেকে ভোক্তার ঝুড়ি পর্যন্ত সবজি বদলায় কমপক্ষে পাঁচ-ছয় হাত। আর প্রতিটি হাতবদলে বাড়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ২০ টাকা। ফলে কৃষক যেমন ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত, তেমনি বাড়িতে দামে পুড়ছেন ভোক্তা। আর এ পুরো সমীকরণে লাভবান হয় শুধুই মধ্যস্বত্বভোগীরা।
গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে আরও ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে। আর পাতাযুক্ত নতুন পেঁয়াজের কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে পণ্যটি আমদানির দাবি জানিয়ে আসছিলেন আমদানিকারকেরা। তবে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে না।
আলুর বাজারে দুটো বাস্তবতা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। বাজারে নতুন আলু এসেই নিজের জাত চেনাচ্ছে। প্রতি কেজি আলু হাঁকা হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। পুরোনো আলুর দরও বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকার মতো। বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে।
সবজির বাজার চড়া হলেও ডিম ও মুরগির বাজারে কিছুটা সুবাতাস বইছে। গত সপ্তাহের মতো ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। যদিও পাড়া-মহল্লায় ১২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুরগির বাজার গত সপ্তাহের মতো স্থির রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৭০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৬০ থেকে ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ-মাংসের বাজারে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের জানিয়েছেন, সয়াবিন তেল লিটারে ৫ থেকে ৬ টাকা বাড়তে পারে। তবে সরবরাহে কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।



































