Apan Desh | আপন দেশ

সিলেট-৬ আসনের বিজয় অসম্ভব করছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী

সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৮:২৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

সিলেট-৬ আসনের বিজয় অসম্ভব করছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী

ফাইল ছবি

সিলেট-৬ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীকে ঘিরে তীব্র অসন্তোষে ফুঁসছে তৃণমূল। গ্রহণযোগ্যতা, অতীত রেকর্ড ও ভোট টানার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নে জয়ের সম্ভাবনা দ্রুত ক্ষীণ হচ্ছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ- ভুল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে দল নিজেই বিজয়কে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়, সিলেট-১, ২, ৩ ও ৬ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। তবে সিলেট-৪ ও ৫ আসন দুটিতের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

সিলেট-৬ আসনে দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী। দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ- অসন্তোষ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্ব ও তৃণমূল কর্মীরা তার গ্রহণযোগ্যতা, অতীত রেকর্ড এবং নির্বাচনী সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

ঘোষণার পরই মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার পরিবেশ তৈরি হয়। বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- আমরা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেছি। যাকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে তিনি দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক। তিনি সাংগঠনিকভাবে জ্ঞানী। কিন্তু ভোটের রাজনীতি বুঝেন না। এদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন- মনোনয়ন ঘোষণার পর বাড়ি থেকে বের হলে মানুষ জিজ্ঞেস করে- আমরা আশা করলাম কী, আর পেলাম কী! এত হতাশা আগে কখনো দেখিনি।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র ব্যানারে এক আলোচনা সভা হয়। এতে বিএনপির নেতা-কর্মী সিলেট-৬ আসনে ‘একটা নিরপেক্ষ রিভিউ’র মাধ্যমে দলের প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করেন।

বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় এ সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন। এ সময় একাধিক বক্তা বিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার জন্য দলের উচ্চপর্যায়ের প্রতি অনুরোধ জানান।

তৃণমূলের বড় একটি অংশ মনে করছে, ২০১৪ সালের গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়ে এমরান আহমদ চৌধুরী জামায়াতের প্রার্থীর কাছে তিনগুণ ভোটে পরাজিত হয়ে পঞ্চম হওয়া তার বর্তমান মনোনয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। নেতাকর্মীদের মতে- এটি একটি স্পষ্ট সংকেত যে তিনি ভোটের রাজনীতিতে দুর্বল।

স্থানীয় পর্যায়ের ভাষ্য- যিনি উপজেলায় জিততে পারেননি, তিনি জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে দাঁড়াবেন?

সোশ্যাল ছড়িয়ে পড়া তার কিছু ছবি ও বিতর্কিত আচরণ নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে—নিজ এলাকার কর্মীদের সঙ্গে মাঠে না নামিয়ে তিনি অন্য উপজেলা থেকে লোক এনে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছেন। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে তার দূরত্ব আরও প্রকট হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে গত বছর আগস্টের শহীদদের হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে ‘মামলা বাণিজ্য’-এর অভিযোগ। ওই মামলাকে ঘিরে এলাকায় তীব্র জনরোষ তৈরি হয় এবং নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, এ বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এমরান চৌধুরী সক্রিয় ছিলেন। তাদের মতে- মামলা বাণিজ্যর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে উঠলে তা সামাল দেয়া কঠিন।

জানা গেছে, বিগত ৪৫ বছরে বিএনপি এই আসনে কখনই জয় লাভ করতে পারেনি। বিগত ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়া নির্বাচন পরবর্তীকালে বিএনপিতে যোগ দিলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনমানুষের জন্য তার ব্যাপক অবদানের কারণে বিএনপির একাংশ তার মেয়ে বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আদিবা হোসেনকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চায়। তারা মনে করছেন- আদিবা হোসেন সাধারণ জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং তরুণ ও নারী ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়।

অপরদিকে বিএনপির আরেক অংশ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে দাবী করছে। তাদের মতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন ও স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। বর্তমানে তার দুজনেই এলাকায় সক্রিয় আছেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা মনে করেন, সিলেট-৬ অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন। জামায়াত এখানে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তাই প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হলে এর মূল্য দলকে দিতে হবে। একজন উপজেলা পর্যায়ের নেতা বলেন- ‘জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় একজন নেতা এখানে নির্বাচন করছেন। জামায়াত শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি ভুল প্রার্থী দিলে আসন হারানো সময়ের ব্যাপার। আমরা চাই এমন প্রার্থী যাকে ভোটাররা চেনেন, মানেন এবং যিনি ভোট টেনে আনতে পারবেন।

মনোনয়ন ঘোষণার পর এলাকায় যে নীরবতা নেমে এসেছে, তা ইঙ্গিত দিচ্ছে- সিলেট-৬ আসনের লড়াই এখনো স্থিতিশীল নয়। তৃণমূলের বড় অংশ বিশ্বাস করে, প্রার্থী পুনর্বিবেচনা করলে এবং গ্রহণযোগ্য কাউকে মনোনয়ন দিলে বিএনপি এখানে বিজয়ের পথে ফিরতে পারে।

এ বিষয়ে সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, ছাত্রদলের মাধ্যমে আমার রাজনীতি শুরু। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি থেকে শুরু করে বিএনপির নানা দায়িত্বে ছিলাম। এখন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। দলকে সাংগঠনিকভাবে সুসংহত করতে সব সময় কাজ করছি। বড় দল হওয়ায় অনেকেই সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন, এর মধ্যে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছেন। তবে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন এখনো অভিমান করে আছেন, তারাও নিশ্চয়ই দ্রুত ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করবেন।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ
SS Power

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়