
ছবি: আপন দেশ
নোয়াখালীর সবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তুলে নেয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও মিজানের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার (০৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার ভূঁইয়ার হাট বাজারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) গভীর রাতে মিজান মাঝিকে নিজ বসতঘর থেকে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা তুলে নেয় বলে অভিযোগ উঠে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভূঁইয়ার হাট বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা, ব্যবসায়ী আহসান উল্ল্যাহ, আবুল খায়ের, আব্দুল করিম প্রমূখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝি বিএনপি নেতা, পাশাপাশি একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। ভূঁইয়ার হাট বাজার, হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট, বাংলা বাজারসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় তার মৎস্য, হার্ডওয়ার, টিন ও ইলেক্ট্রনিকস ব্যবসা রযেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ নেই। থানায় মামলা নেই। অথচ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মিজান মাঝিকে ঘরের দরজা ভেঙে তাঁর হাত-পা, চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা। অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তারা।
আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝির স্ত্রী আফরোজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪০ মিনিটে কিছু ৩০-৩৫জন লোক তাদের ঘরের ৩টা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেন। এ সময় তারা নিজেদের কোস্টগার্ড পরিচয় দিয়ে আমার স্বামীর হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন। এছাড়া ঘরের সব মালামাল তছনছ করেন।
তিনি আরও বলেন, পরে তারা আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাদের ঘরে কোনো মালামাল লুট হয়নি মর্মে মুঠোফোনে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে মিজানকে তুলে নিয়ে যান কোস্টগার্ড সদস্যরা।
মিজান মাঝির ছেলে শাহাদাত হোসেন রুবেল বলেন, তার বাবা চরবাটা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাবার বিরুদ্ধে চরজব্বর থানা অথবা অন্য কোথাও কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই। অথচ রাজনীতি ও ব্যবসায়িক কারণে আমার বাবার বিরুদ্ধে কিছু লোক শত্রুতা করছে। তারা কোস্টগার্ডকে দিয়ে বাবাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রুবেল বলেন, তার বাবাকে বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় নিয়ে গেলেও শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত থানায় হস্তান্তর না করে অস্ত্র উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়ে অস্ত্র, ডাকাতিসহ বিভিন্ন খারাপ মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অবিলম্বে আমার বাবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাই।
চরজব্বর থানার ওসি শাহীন মিয়া বলেন, মিজান মাঝিকে আটক বা অভিযানের বিষয়ে কোস্টগার্ড আমাদেরকে কিছুই জানাননি। রাতে মিজান মাঝির পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি আমাদের জানানোর পর পুলিশ ওখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কোস্টগার্ডের কাছে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে, কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকতা লে. কমান্ডার বিএন মো. সিয়াম-উল-হক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, নোয়াখালীর হাতিয়ার বাংলা বাজার মাছ ঘাটে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে মিজান ডাকাতের (৪৫) মাছের আড়তে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র রয়েছে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মিজান ডাকাতকে আটক করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মিজানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলা বাজার বিসমিল্লাহ মৎস্য আড়ত তল্লাশি করে ৯টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ১ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ ও ৩টি দেশীয় অস্ত্র, ২৯টি হাত বোমা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত আলামতসহ তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।