
প্রতীকী ছবি
আজকের ব্যস্ত জীবনে পিঠ ও কোমরের ব্যথা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন চেয়ারে বসে কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা কিংবা একই ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার কারণে মেরুদণ্ড ও পিঠের পেশীগুলোতে চাপ পড়ে। আগে এ সমস্যা শুধু বয়স্কদের মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু এখন ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যেও এটি দ্রুত বাড়ছে।
অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনছে। একই ভঙ্গিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলে মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যার ফলে ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। শুধু তাই নয়, এর কারণে চোখেও চাপ পড়ে ও দৃষ্টিশক্তি কমার ঝুঁকি বাড়ে।
এছাড়াও রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যাওয়ার কারণে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এমনকি এটি মানসিক চাপও বাড়াতে পারে। এ বিপদ থেকে বাঁচতে নিয়মিত কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। যেমন, কাজের ফাঁকে উঠে হাঁটা, স্ট্রেচিং করা ও সঠিক ভঙ্গিতে বসা।
কীভাবে বসবেন?
চেয়ারে বসার সময় আপনার মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। হাঁটু ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে রাখুন ও আপনার পা মেঝেতে সমানভাবে রাখুন। পিঠের নিচের দিকে একটি ছোট বালিশ ব্যবহার করলে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ কমবে।
এ ভুলগুলো কখনোই করবেন না!
-
ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানো: দীর্ঘক্ষণ ভুল ভঙ্গিতে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে মেরুদণ্ড ও পিঠের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
-
দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে থাকা: একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর একটু হাঁটুন।
-
ব্যায়ামের অভাব: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম না করলে পেশী দুর্বল হয়ে যায়।
-
ভারী জিনিস তোলা: ভুলভাবে ভারী জিনিস তুললে মেরুদণ্ডে আঘাত লাগতে পারে।
-
হঠাৎ ঝুঁকে কাজ করা: কোনো কিছু তোলার সময় বা কাজ করার সময় হঠাৎ ঝুঁকে গেলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট মেরুদণ্ডের কিছু সহজ ব্যায়াম করুন। এতে আপনার মেরুদণ্ড নমনীয় থাকবে ও পেশী শক্তিশালী হবে।
-
ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ: এ ব্যায়ামটি আপনার মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।
-
চাইল্ড'স পোজ: এ ব্যায়ামটি পিঠ ও কোমরের পেশী শিথিল করতে খুব কার্যকর।
-
ব্রিজ এক্সারসাইজ: এ ব্যায়ামটি কোমরের পেশী শক্তিশালী করে।
ভারী ওজন তোলার সময় সাবধানতা
ভারী জিনিস তোলার সময় হাঁটু ভেঙে বসুন, পিঠ সোজা রাখুন ও জিনিসটি আপনার শরীরের কাছাকাছি ধরে তুলুন। এতে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়বে না।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
-
প্রতি ৩০ মিনিট পর পর আপনার চেয়ার ছেড়ে উঠে কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন।
-
আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনটি এমন উচ্চতায় রাখুন যেন এটি আপনার চোখের সমান উচ্চতায় থাকে।
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
যদি আপনার ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়, তবে একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজন হলে এমআরআই করিয়ে নিন।
এ নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি কর্মক্ষেত্রে সুস্থ থাকতে পারবেন। পিঠ ও কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
আপন দেশ/এমবি