
সিগমা লোগো
আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিগমার নাম, লোগো ও সুনাম ব্যবহার করে নিম্নমানের লিফটে দেশের বাজার সয়লাভ হয়ে গেছে। আমেরিকার বিখ্যাত এ কোম্পানির ভুয়া লোগোর নকল লিফট কিনে ভবন মালিকরা বিপাকে পড়েছে। শুধু তাই নয়, হুমকির মুখে পড়েছে উচ্চতলা ভবনগুলোতেও জননিরাপত্তা।
বিশ্বখ্যাত Otis Elevator Company, USA-এর অনুমোদিত ব্র্যান্ড ‘SIGMA’— যার একমাত্র বাংলাদেশি অথরাইজড ডিস্ট্রিবিউটর হচ্ছে খান ব্রাদার্স ইক্যুবিল্ড লিমিটেড। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির খান অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে ‘SIGMA’ ব্রান্ড এর অর্থোরাইজড ডিষ্ট্রিবিউটর হিসেবে লিফট সরবরাহ করে আসছি। কিন্তু বাজারে একাধিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীনভাবে সিগমা লোগো ব্যবহার করে নকল লিফট সরবরাহ করছে। যা মানহীন, বিপজ্জনক এবং প্রতারণামূলক।
তিনি বলেন, যেহেতু লিফট জগতে ‘SIGMA’ আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রথম সারির ব্রান্ড। এছাড়া দেশের ভোক্তা পর্যায়ে এ ব্রান্ডের লিফটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেজন্য এ সুযোগে একটি অসাধু প্রতারক ব্যবসায়ী চক্র লিফটের দামি যন্ত্রাংশ বদলে নিম্নমানের মোটর, কন্ট্রোলার, ডোর ড্রাইভ, এসএস সিট বসিয়ে দিচ্ছে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশেই নিজস্ব ওয়ার্কশপে এসব যন্ত্রাংশ তৈরি করে পরে লিফটের বোর্ডে শুধু ‘SIGMA’ লিখে সেটিকে আসল বলে চালিয়ে দেয়। এতে ভবন মালিকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তেমনি লিফট ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন।
তোফায়েল কবির খান আরও অভিযোগ করে জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আরওপড়ুন<<>>ট্রাক আটকে এনসিপি নেতা চাঁদা দাবি, সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার
তিনি বলেন, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমি বলছি— এ প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে জনগণের জীবন নিয়ে প্রতিনিয়ত খেলা চলবে। প্রতারণার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের Department of State থেকে Secretary of State Mr. Anthony Blinken স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে বলেও জানান খান ব্রাদার্স ইক্যুবিল্ড লিমিটেডর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ।
ভুয়া SIGMA লিফট সরবরাহে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- বাংলাদেশ বিল্ডিং অটোমেশন, মালিবাগ, ঢাকা। সিগমা এলিভেটর বাংলাদেশ লিমিটেড, দক্ষিনখান, ঢাকা। সিগমা লিফট লিমিটেড, কারওয়ান বাজার। ক্রেস্ট লিফটস লিমিটেড, মগবাজার, সিটি পাওয়ার লিফট, নামাপাড়া। সিগমা লিফট বিডি, মিরপুর। সিগমা লিফট সাংহাই, অনলাইন ভিত্তিক আজিজ লিফট টেকনোলজি লিমিটেড, মহাখালী। এদের অনেকের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগও করা হয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান এখনও অবলীলায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, ভোক্তা অধিদফতরে অভিযোগ জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করছেন তারা। ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম গত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৩ ফেব্রুয়ারি কাওরানবাজার অফিসে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলেন। কিন্তু অভিযোগের দিন তিনি নিজেই অনুপস্থিত থাকেন বলে জানা গেছে। এ ধরনের গাফিলতি শুধু রহস্যজনক নয়, বরং ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
উল্লেখ্য, সিগমা ব্র্যান্ড গত অর্থ বছরে Sigma Elevator Co. Korea কর্তৃক স্বর্ণপদক অর্জন করে। যা বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যক লিফট সরবরাহের স্বীকৃতি। খান ব্রাদার্স এ অর্জনের অংশীদার হিসেবে গর্বিত হলেও, দেশে নকল লিফটের এমন ছড়াছড়ি সেই সুনামকে ধূলিসাৎ করছে।
তোফায়েল কবির খান বলেন, নকলের এ ভয়াবহতা রুখতে প্রশাসনের উচিত দ্রুত ‘ভেজালবিরোধী অভিযান’ শুরু করা। সিগমার মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের স্বার্থ ও ভোক্তার জীবনরক্ষা এখন সময়ের দাবি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এ জালিয়াত চক্রকে আইনের আওতায় আনা এবং ভোক্তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের নিম্নমানের লিফট থেকে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা, যার দায় কেউ এড়াতে পারবে না।
এ প্রতিবেদনটি একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে— যেখানে বিশ্বমানের পণ্যের ছদ্মবেশে নকল প্রযুক্তি ক্রমশ জনগণের জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। আর দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।