Apan Desh | আপন দেশ

ক্ষমতায় ফিরতে কতটা প্রস্তুত বিএনপি?

মারুফ বিল্লাহ

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ২১:৪৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ক্ষমতায় ফিরতে কতটা প্রস্তুত বিএনপি?

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দীর্ঘ ১৫ বছরের কঠিন সময় পার করার পর নতুন আশায় বুক বাঁধছে। আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। এতে নেতা-কর্মীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। 

বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশের জনগণ বিএনপিকে পরবর্তী সরকার হিসেবে দেখতে আগ্রহী। কিন্তু প্রশ্ন হলো— বিএনপি কি এ দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার জন্য প্রস্তুত? শুধু একটি নির্বাচন জেতাই তাদের লক্ষ্য? দেশকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের কী ধরনের প্রস্তুতি আছে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দলটির মূল আদর্শ ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ আজও দেশের মানুষের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। ১৯৯১ সালে বিএনপি দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটায়। এরপর থেকে বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ধারণাটিও বিএনপির একটি বড় অবদান। যা পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল।

বিএনপির শাসনামলে অর্থনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু যুগান্তকারী সংস্কার আনা হয়েছিল। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থা স্থিতিশীল করা হয়। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন উচ্চশিক্ষার সুযোগ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি ও শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এ ছাড়াও সরাসরি মেয়র নির্বাচন চালু করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হয় ও SAFTA চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। এমনকি, নারী ফুটবলের মতো অপ্রচলিত খেলাধুলায়ও তাদের ভূমিকা ছিল।

আরও পড়ুন>>>‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন’

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি তার স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশের মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। তার শাসনামলে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, কৃষিকে আধুনিকীকরণ, আমদানি নির্ভরতা কমানো ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি শুরু করা হয়। তিনি পোশাক শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন ও সার্ক (SAARC) গঠনের ধারণাতেও তার অবদান ছিল। শত চেষ্টা সত্ত্বেও তার সততার খ্যাতি আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেন। একসময় গৃহিণী হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি একজন দক্ষ নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। তার শাসনামলে শিক্ষা ও স্বনির্ভরতার ওপর জোর দেয়া হয়। দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ আজকের তুলনায় অনেক উন্নত ছিল, টাকার মূল্য ভারতীয় রুপির প্রায় সমান ছিল। তার আমলে করা কর সংস্কার একটি উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন বাজেটের জন্য পথ খুলে দেয়। বর্তমানে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও দলের নেতৃত্ব তারেক রহমানের হাতে।

তারেক রহমান-এর সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো শেখ হাসিনার কঠোর দমন-পীড়নের মধ্যেও দলকে টিকিয়ে রাখা। তিনি দল ও দেশকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে ৩১-দফা সংস্কার পরিকল্পনা দিয়েছেন। তবে তার অনুপস্থিতি নেতৃত্বকে দুর্বল করে তুলেছে। 

বিএনপির অন্যতম বড় দুর্বলতা হলো আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার অভাব। দলে কোন্দল, এক আসনে একাধিক প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা ও সিনিয়র নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। সদস্যপদ তালিকা পুরোনো ও অস্বচ্ছ। যা সুবিধাবাদীদের সুযোগ করে দেয়। পার্টি কাউন্সিলগুলো এখন আর নিয়মিত হয় না। যার ফলে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা কমে গেছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই না হওয়া ও যুব নেতৃত্বকে সামনে না আনাও দলের বড় সমস্যা।

তবে দলটির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারা। ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। যা দল ও দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি বয়ে এনেছিল। 

বিএনপিকে নিজেদের প্রমাণ করতে হলে শুধু প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না, কাজ করে দেখাতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে যে তারা অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি অবকাঠামো নির্মাণ নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। তাদের উচিত নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা ও জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা।

বিএনপি এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে। তারা কি নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সংস্কারের পথে হাঁটবে, নাকি আবারও পুরোনো ভুলগুলো করবে? জনগণ তাদের কাজের মাধ্যমে উত্তর খুঁজবে, কথার মাধ্যমে নয়।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়