
ফাইল ছবি
সফলতা অর্জন করতে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেইএ কথা সত্যি। কিন্তু শুধু পরিশ্রম করলেই সব সময় সফলতা আসে না। পরিশ্রমের সঙ্গে যদি সঠিক কৌশল বা স্মার্ট কৌশল যুক্ত না হয়, তাহলে অনেক সময় সে পরিশ্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করলে সফলতার পথ অনেক মসৃণ হয়।
আমরা অনেকেই জীবনে এমন মানুষকে দেখে থাকি—যারা অন্যকে ঠকায়, নিজের স্বার্থে কাজ করে, আবার সে মানুষটাই টাকা, ক্ষমতা আর মর্যাদায় ওপরে উঠে যায়। অন্যদিকে, যারা সৎ, পরিশ্রমী আর দয়ালু, তারা অনেক সময়েই অবহেলিত থেকে যান। এ বিষয়টা অনেককে হতাশ করে। মনে হয়, ভালো থাকার কোনো মূল্যই নেই।
আসলে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। সব অসৎ মানুষই সফল হয় না। আবার সব ভালো মানুষই ব্যর্থ হয় না। তবে এটা সত্যি যে কিছু মানুষ দ্রুত এগিয়ে যায়। কেন এমন হয়? আর ভালো থেকে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব?
সফলতার পথে 'ভালো' বনাম 'খারাপ'
অনেকের ধারণা, সফল হওয়ার জন্য কেবল কঠোর পরিশ্রমই যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক কৌশল।
১. ঝুঁকি নেয়ার সাহস কিছু মানুষ সহজে ঝুঁকি নিতে পারে। তারা যখন একটা সুযোগ দেখে তখন সেটা কাজে লাগাতে দ্বিধা করে না। এমনকি যদি তারা পুরোপুরি প্রস্তুত নাও থাকে। অন্যদিকে অনেক ভালো মানুষ অতিরিক্ত সতর্ক হয়। তারা ভাবে যদি ব্যর্থ হই, তাহলে কী হবে? এ সাবধানতার কারণে তারা অনেক সুযোগ হারায়। সফল হতে হলে ঝুঁকি নেয়ার সাহস থাকতে হয়।
২. আত্মবিশ্বাস ও প্রচার 'খারাপ' বা কৌশলী মানুষরা নিজেদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে তুলে ধরে। তারা নিজেদের কথাগুলো জোর দিয়ে বলে ও নিজেদের অর্জনগুলো সবার সামনে তুলে ধরে। কিন্তু অনেক ভালো মানুষ চুপচাপ কাজ করে। তারা ভাবে, আমার কাজ একদিন মানুষ দেখবে, মূল্যায়ন করবে। কিন্তু এ পৃথিবীতে যারা নিজেকে তুলে ধরে, তাদেরই সুযোগ দেয়া হয়। তাই নিজের অর্জন নিয়ে কথা বলা ও নিজেকে প্রকাশ করা খুবই জরুরি।
৩. নেটওয়ার্কিং ও সম্পর্ক আমরা প্রায়ই দেখি কিছু মানুষ খুব প্রভাবশালী। তারা তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দ্রুত এগিয়ে যায়। তারা জানে কার সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে লাভ হবে। কিন্তু ভালো মানুষরা এগুলোতে জড়াতে চায় না। তারা ভাবে, সৎভাবে কাজ করলে সাফল্য আসবেই। শুধু কঠোর পরিশ্রম নয়, সঠিক মানুষের সঙ্গে সংযোগও সফলতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামের দৃষ্টিতে সাফল্য ও ভালো থাকা
ইসলাম ধর্ম সফলতাকে শুধু টাকা-পয়সা বা ক্ষমতার মাপকাঠিতে দেখে না। বরং নৈতিকতা, সম্মান ও আন্তরিক শান্তিকেও সফলতার অংশ মনে করে।
আর যারা মন্দ কাজ করে, তাদের জন্য মন্দ ফল রয়েছে। (সূরা ইউনুস, ১০:২৭)
এ আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে অন্যায় ও খারাপ কাজের ফল কখনোই ভালো হয় না। হয়তো সাময়িকভাবে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর ফল খারাপ হয়।
আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা সৎ ও ভালো কাজ করে। (সূরা নাহল, ১৬:১২৮)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ ভালো মানুষের পাশে থাকেন। তাদের পথ কঠিন হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের অবস্থা অদ্ভুত! তার জন্য সবকিছুই কল্যাণকর। যদি সে কোনো সুখে থাকে, সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, আর এটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি সে কোনো দুঃখে থাকে, সে ধৈর্য ধারণ করে, আর এটা তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম) অর্থাৎ, একজন ভালো মানুষ যেকোনো পরিস্থিতিতেই লাভবান হয়।
ভালো থেকে কীভাবে সফল হবেন?
ভালো মানুষ হওয়া মানে এ নয় যে আপনাকে দুর্বল হতে হবে। ভালো থেকে কীভাবে কৌশলী হয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়, তার কিছু উপায় নিচে দেয়া হলো-
-
নিজের সাফল্যের কথা বলুন: অন্যকে অপেক্ষা করানোর চেয়ে নিজেই জানান আপনি কী অর্জন করেছেন।
-
'না' বলতে শিখুন: সাহায্য করুন। কিন্তু নিজের সীমা নির্ধারণ করুন। অন্যের কাজে অতিরিক্ত জড়িয়ে নিজের ক্ষতি করবেন না।
-
উদ্দেশ্যমূলক নেটওয়ার্ক তৈরি করুন: শুধু বন্ধুত্ব নয়, এমন সম্পর্ক তৈরি করুন যা আপনার কাজে আসবে।
-
ঝুঁকি নিতে ভয় পাবেন না: কিছু চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাতে শিক্ষা থাকে।
-
আত্মবিশ্বাসী হোন: নিজেকে ছোট করে দেখবেন না। আপনার কাজকে বিশ্বাস করুন।
জীবন সহজ নয়। তবে আপনি যদি বুঝে খেলেন, ভালো থেকেও জিততে পারেন।
আপন দেশ/এমবি