Apan Desh | আপন দেশ

সোহাগ হত্যার মুলে পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তার: ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ১৬ জুলাই ২০২৫

সোহাগ হত্যার মুলে পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তার: ডিএমপি

ছবি : আপন দেশ

রাজধানীর মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে শুরু করেছে। পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তার কেনাবেচা নিয়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে পরিচিতরাই এ ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিহত সোহাগ বিগত সরকারের সময় সাবেক এমপি হাজী সেলিমে ভাগ্নে পিল্লু কমিশনারের ছত্রছায়ায় পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা করত। চোরাই তার কিনে সে অ্যালমুনিয়ামের ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করতো। বিগত ১৭ বছর ধরে সোহাগ এ কাজ করেছে।

গত ৫ আগস্টের পরে সে তার ভোল পাল্টে অন্য রাজনৈতিক দলের দিকে আসছে। এখানে আরেকটি গ্রুপ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। তখন ব্যবসায়িক একটি বিভেদ তৈরি হয় তাদের মধ্যে। তারা উভয় পক্ষই পূর্বপরিচিত। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও কোন্দল থেকে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তাদের ব্যক্ততিগত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্ব থেকে হত্যাকাণ্ডটা সংগঠিত হয়েছে। এটা নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলানো বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড হয়নি।

এর আগে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত ৯ জুলাই বিকাল আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩ নং গেইটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর কতিপয় দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লাল চাঁন ওরফে সোহাগ নামের এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আমরা এ ঘটনায় মর্মাহত ও নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনা চলাকালে ৯৯৯ এর মাধ্যমে চকবাজার থানার ওসি ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে বিষয়টি চকবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করলে ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক সরোয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়, অভিযুক্তরা একটি মবের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। 'চাঁদাবাজদের জায়গা নেই, ব্যবসায়ীদের ভয় নেই' এমন স্লোগান দিচ্ছে। এ অবস্থায় চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সরোয়ার ঘটনাস্থল থেকে মাহমুদুল হাসান মহিন ও ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে রবিন নামের অপর একজনকে গ্রেফতার করে।

পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য যে, ভিকটিম সোহাগকে পাথর নিক্ষেপকারী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেলেও সে সময় তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পরবর্তীতে পুলিশের বিশেষ টিমের সহায়তায় তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তার অবস্থান চিহ্নিত করে ১৫ জুলাই পটুয়াখালী জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার নাম মো. রেজওয়ান উদ্দিন অভি। বাবার নাম মনোরঞ্জন বসু, মায়ের নাম বিউটি দেব মিলা। সে একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। এ ঘটনায় পাথর নিক্ষেপকারী দুইজনসহ মোট ৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার এজাহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হলো, মামলার এজাহার দায়েরের জন্য প্রথমে তার সাবেক স্ত্রী লাকি আক্তার থানায় আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে ভুক্তভোগীর সৎ ভাই রনিও থানায় আসে। তারা নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে ২৩ জনকে আসামি করে একটি খসড়া এজাহার প্রস্তুত করে।

এর মধ্যে ভুক্তভোগীর আপন বড় বোন মঞ্জু আরা বেগম থানায় এসে এজাহার দাখিলের আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন তার সামনে পূর্বের খসড়া এজাহার উপস্থাপন করা হয়। তখন বাদীর মেয়ে ওই খসড়া এজাহারের ছবি তুলে রাখে। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভুগীর বোন ওই খসড়া এজাহার থেকে ৫ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে আরও একজনের নাম সংযোজন করে মোট ১৯ জনকে আসামি করে এজাহার দাখিল করে।

তিনি বলেন, এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো এবং এ ধরনের জঘন্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ, লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়