ফাইল ছবি
ইসরাইলি দখলদার বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত একজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা ও নয়জনকে আহত করেছে। বৈরুত এ হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও এক বছর ধরে চলা যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ইরানভিত্তিক তাসনিম নিউজ।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বৃহস্পতিবারের (০৬ নভেম্বর) হামলায় তারা হিজবুল্লাহর ‘ঘাঁটিগুলোকে’ লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠনটিকে নিরস্ত্র হতে অস্বীকৃতির অভিযোগ করেছে।
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরাইলি বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই লেবাননের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছে। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও ইসরায়েলি আগ্রাসন চলতে থাকলে অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এই হামলাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি পূর্ণাঙ্গ অপরাধ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছেন সন্ত্রাস ছড়ানো ও বেসামরিক জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য।
আউন বলেন, গত এক বছরে ইসরাইলের আচরণ স্পষ্ট করেছে—তারা কোনো আলোচনাভিত্তিক সমাধান চায় না।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানায়, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান টাইরের তুরা এলাকায় আবাসিক পাড়া লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে একজন লেবাননি নিহত ও আটজন আহত হন। তায়র দেব্বা এলাকায় আরও একজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদক জেইনা খোদর জানান, হামলাটি হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে লেবাননের নেতৃত্বের উদ্দেশে পাঠানো এক খোলা চিঠির কয়েক ঘণ্টা পর ঘটে। যেখানে সংগঠনটি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছিল।
আরও পড়ুন<<>>জাপানে জনশক্তির ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ
তিনি বলেন, এই হামলাকে ইসরাইলের পক্ষ থেকে হিজবুল্লাহর উদ্দেশে পাঠানো বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসরাইলি যুদ্ধবিমান বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় আকাশসীমাও লঙ্ঘন করেছে, যা স্থানীয়ভাবে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে বিবেচিত।
লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরাইলের এই বোমাবর্ষণ বেসামরিক জনগণকে বিপন্ন করছে এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে।
সংস্থাটি সতর্ক করেছে, এ ধরনের সামরিক পদক্ষেপ বেসামরিক জীবনের ঝুঁকি বাড়ায় ও কূটনৈতিক অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ইউনিফিল বলছে, যুক্তরাষ্ট্র একদিকে লেবাননকে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র করতে চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়টি উপেক্ষা করছে।
হিজবুল্লাহ পুনরায় ঘোষণা করেছে যে তারা দখলদার ইসরাইলি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না।
সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আমাদের দেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার বৈধ অধিকার পুনরায় ঘোষণা করছি। শত্রুর আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে আমরা নীরব থাকব না।
লেবানন ও ইসরাইল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে রয়েছে এবং শুধুমাত্র জাতিসংঘ, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সীমিত যোগাযোগ বজায় রাখে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইসরাইলের হাতে হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার প্রায় এক বছর পরও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা উচ্চ পর্যায়ে রয়ে গেছে।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, লেবাননের সেনাবাহিনীকে বছরের শেষে দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু হিজবুল্লাহর দাবি, ইসরাইল ওই চুক্তিকে দখল আরও শক্তিশালী করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সংগঠনটি বলেছে, ইসরাইলি সেনারা যতদিন লেবাননের ভূমিতে অবস্থান করবে এবং আগ্রাসন চালাবে, ততদিন তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
আপন দেশ/এসআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































