Apan Desh | আপন দেশ

গাজায় আরও ৩২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১০:৫১, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

গাজায় আরও ৩২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি বাহিনী

ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নৃশংস গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। দখলদাররা সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরীটির ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদের উদ্ধারে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি হামলার মাত্র আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নারকীয় হামলা চালিয়ে আরও ৩২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভোর থেকে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ৩২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে খান ইউনিসে বাড়ির ভেতরে ১১ জন পুড়ে মারা গেছে। ওই বাড়ির আশপাশের বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

একই সময়ে পশ্চিম গাজা সিটিতে আশ্রয় নেয়া বাড়িতে বিমান হামলায় একই পরিবারের সাত সদস্য নিহত হন। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে একদল লোককে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলায় দুই মেয়েসহ তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ হাজার ২৬৬ জনে পৌঁছেছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ৬০ জনেরও বেশি মানুষকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এ হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এদিকে গাজার বর্তমান অবস্থা যেন এক বন্দিশিবিরে রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী উপত্যকার প্রধান সংযোগ সড়কগুলো বন্ধ করে ফেলার পাশাপাশি গাজাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। 

জানা গেছে, গাজার মোট ভূখণ্ডের ৬৯ শতাংশকেই ‘নো-গো জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে দখলদার ইসরায়েল, যেখানে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ তো দূরের কথা, নড়াচড়াও করতে পারছে না।

সংঘাতময় এ প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের পুনরায় গ্রেফতারের পরিকল্পনা করছে, যেন হামাসের ওপর চাপ আরও বাড়ানো যায়।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়