Apan Desh | আপন দেশ

মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্তদের ৬০ ভাগ কর্মহীন হয়ে পড়েন

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্তদের ৬০ ভাগ কর্মহীন হয়ে পড়েন

ছবি : আপন দেশ

পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন। ২০২০ সালে শুধু কোমর ব্যথায় ৬১৯ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে ৮৪৩ মিলিয়ন। প্রতি পাঁচজনে চারজন জীবনের কোনো না কোনো সময় মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হন। কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মজীবীদের বড় একটি অংশ এ রোগে রোগে আক্রান্ত।  

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব স্পাইন দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক অফিসের কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে আলোচনা করেন ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের নিউরো স্পাইন ইউংয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি পাঁচজনে চারজন মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।

কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত চাকরিজীবীদের বড় একটি অংশ মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত। এ কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আট কোটি ৩০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বছরে এর চিকিৎসা ব্যয় দাঁড়ায় ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সমস্যায় আক্রান্তদের কারণে সৃষ্ট উৎপাদনহীনতায় যে ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিন বলেন, ২০২০ সালে শুধু কোমর ব্যথায় ৬১৯ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৮৪৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।

গত বছর যক্তরাষ্ট্রে কোমর ও ঘাড় ব্যথার চিকিৎসায় ১৩৪.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসার চেয়েও বেশি—যোগ করেন তিনি। 

এ সময় মেরুদণ্ডের সমস্যার প্রকোপ দিন দিন বাড়ার কারণ উল্লেখ করে ডা. সালাহ উদ্দিন বলেন, এ ক্ষেত্রে স্থুলতা ও ধূমপানের পাশাপাশি পেশা একটি বড় কারণ। এ ছাড়া কম শারীরিক শ্রমের জীবনধারা, দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করা অন্যতম কারণ। একইভাবে কঠোর পরিশ্রমের যেসব কাজ রয়েছে, সেসব কাজে যুক্তরা স্পাইনাল সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন। 

আরও পড়ুন<<>> দেশজুড়ে প্রথমবার টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু

তিনি বলেন, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে মেরুদণ্ডের রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বোঝা হলো মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগ (স্পাইনাল কাড)। এ রোগে সারাপৃথিবীতে প্রতি বছর ১৫.৪ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। স্বল্পআয়ের দেশে মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগীদের বেশিরভাগ মারা যান। যারা বেঁচে থাকেন, পঙ্গুত্ব হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। এসব রোগীদের ৩৪.৬ ভাগ হুইল চেয়ার বা শয্যাশায়ী হয়ে যাচ্ছেন। তাদের আরেকটি বড় অংশ নিজ কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারেন না। এসব রোগীদের প্রায় ৬০ ভাগ স্থায়ী বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন। এটাকে জাতির জন্য বিরাট একটি বোঝা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

ডা. সালাহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত অটোরিকশা থেকে শুরু করে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। স্পাইনাল কড ইনজুরি নিয়ে দেশের একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন ডা. সালাহ উদ্দিন, যা ২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

প্রতি তিন হাজার ২৮০ থেকে ছয় হাজার ৫৬০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। এর বড় একটি অংশ ঢাকা বিভাগ এবং তাদের অধিকাংশ ট্রমাটিক বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের কারণে হয়। যাদের পিঠে অথবা কোমরে আঘাত পেয়ে দুই পা প্যারালাইসিস অবস্থায় চিকিৎসার জন্য আসেন। আর যারা ঘাড়ে আঘাত পেয়ে আসেন, তাদের হাত-পান ও প্রশ্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়—যোগ করেন তিনি। 

নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হান বলেন, গত বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেরুদেণ্ডর সমস্যা নিয়ে দুই হাজার ৩১৯ জন চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে শিশু, কিশোর থেকে পরিণত বয়সের মানুষ রয়েছেন।

ঢামেকে ২৪/৭ চিকিৎসাধীন রোগীদের সেবা চলমান রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক জাহিদ রায়হান বলেন, এসব রোগীদের মধ্যে গত বছর ১ হাজার ২৪২ জনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও এ সংখ্যা তা বাড়ানো যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত অপারেশ থিয়েটার ও অ্যানেসথেশিওলজিস্ট পাওয়া গেলে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা দ্বিগুনের বেশি করা সম্ভব হবে এবং অস্ত্রোপচারে গতি আসবে।

এর আগে সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি র‌্যালি বের হয়ে ঢামেকের শহীদ মিনার সংলগ্ন গেট দিয়ে গিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বাগান গেটে গিয়ে শেষ হয়। 

আপন দেশ/জেডআই

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়