Apan Desh | আপন দেশ

কোটিপতি বানানোর কারখানা জাগৃক - ধারাবাহিক : প্রথমপর্ব

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ: শাহ পরানের দুর্নীতির বাক্স ভরছে কোটি টাকায়   

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ০০:০৬, ৩০ মে ২০২৩

আপডেট: ১৯:০৭, ৩০ মে ২০২৩

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ: শাহ পরানের দুর্নীতির বাক্স ভরছে কোটি টাকায়   

ফাইল ছবি

শাহ পরাণ। পুন্যভূমি সিলেটে তার মাজার। অনেকেই এই মাজারকে গরম ওলির মাজার আখ্যা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন এই মাজারে হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। মধ্যপ্রাচ্যের বোখারা শহর থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য নিজ মামা শাহ জালালের সঙ্গে এই অঞ্চলে এসেছিলেন শাহ পরান। শাহ জালাল ভারত থেকে তার নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দেয়া একজোড়া কবুতর নিয়ে এসেছিলেন সিলেটে। যা পরবর্তীকারে জালালী কবুতর নামে পরিচিতি পায়। এ কবুতর নিধনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তা অমাণ্য করে প্রতিদিনই একটি করে কবুত খেতেন শাহ পরান।

পরবর্তীতে কবুতরের সংখ্যা কমে আসার কারণ অনুসন্ধানের সময়ে জবাই করা কবুতরের পালকগুলো আকাশের দিকে উড়িয়ে দেন শাহ পরান। পালকগুলো কবুতর হয়ে ফিরে আসতো বলে জনশ্রুতি রয়েছে। দুই খোদা ভিরু ব্যক্তি এখন পৃধিবী থেকে বিদায় নিলেও জালালী কবুতর এখনো রয়েছে সিলেটের মাজারে।

বলছিলাম পীর বা ওলি আউলিয়া সিলেটের শাহ পরানের কথা। এখন সিলেটে শাহ পরানের মাজারে ভক্তরা যান, ফেরার সময়ে দান বাক্স ভরে দিয়ে আসেন অর্থ ও স্বর্নালঙ্কারে।

সিলেটের শাহ পরানের নামে চলা মাজার যেমন আয় করছে, তেমনি কোনো প্রকার দৈব শক্তি ছাড়াই মাজারের আয়কে টপকে গিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আরেক শাহ পরান, যিনি উচ্চমান সহকারী হিসেবে সরকারি সংস্থাটিতে চাকরি করছেন।

এই শাহ পরানের আরেক নাম হচ্ছে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেইল্যা। জন্মস্থান কুমিল্লার মুরাদনগরের মানুষ তাকে চেনেন শাহ পরান নামে। শিক্ষা সনদে তার নাম দেলোয়ার হোসেন। আর চাকরির পূর্বে মহল্লা মহল্লায় ডিস সংযোগের চাঁদা সংগ্রহের কাজ করার সময়ে সহকর্মীরা তাকে ডাকতেন দেইল্যা বলে।

অর্থকষ্টে বড় হওয়া শাহ পরানের শিক্ষা সনদগুলোতে পিতার নাম ভিন্ন ভিন্ন থাকার পরও সরকারি চাকরি করছেন এখনো। শৈশব থেকেই সংসারের ঘানি টানতে দেলোয়ার নেমে পড়েন জীবিকা নির্বাহে। মোহাম্মদপুরে ডিস ব্যবসায়ীদের করুণায় জোটে কাজ। বাসা-বাড়ী থেকে ডিসলাইনের চাঁদা কালেকশনের মাধ্যমে টাকা গুনার হাতেখড়ি।

নাদুসনুদুস, মায়াবি ও ফুটফুটে চেহারার দেলোয়ার স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। ফুটফরমায়েস আর মানবিক কারণে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে মাস্টার রোলে ভাউচার ভিত্তিক চাকরি পেয়ে যান মোহাম্মদপুরে হাউজিংয়ের পাম্প অপারেটরের। তৎকালীণ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস। সেই শাহ পরান পাম্পের ফোটা ফোটা পানি ছিটিয়েই আজ সমুদ্রের মালিক বনে গেছেন। উঠেছেন স্বপ্নের চুড়ায়। আর পেছনে তাকাতে হয়নি শাহ পরান ওরফে দেলোয়ার ওরফে দেইল্যার।

প্রভাব আর সাদাকালো অর্থই দেলোয়ার হোসেনের জীবনের গতি পাল্টে দিয়েছে। যেমন পাল্টিয়েছেন রাজনৈতিক আদর্শ। সাইসাই পেয়েছেন পদোন্নতি। গাড়ী, বাড়ী, ব্যাংক ব্যালেন্স, দেশ-বিদেশে বিনিয়োগের হিসাব রাখতে এখন তার লাগছে ক্যাশিয়ার। জীবনের নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ দিতে হয়েছে একাধিক দেহরক্ষী। 

নিত্যদিন দানছদকায় যেমন ভরে উঠছে সিলেটের শাহ পরানের মাজারের দানবাক্স, ঠিক তেমনই টাকার বাণ্ডিল ছাড়া কোনো ফাইল ছাড়েন না জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উচ্চমান সহকারী শাহ পরান।

সরকারি প্লট, ফ্ল্যাট হস্তান্তর, পুণর্বাসন প্লট, নামজারি, প্লট বিক্রয় অনুমতি, বরাদ্দ ইত্যাদি কাজে  তার টেবিল পার করতে গুনতে হয় টাকার বাণ্ডেল। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ের তিন তলায় ৩০৬ নম্বর কক্ষের বসে সহকারীদের মাধ্যমে নিচ্ছেন এ বখরা। 

করেছেন ডেভেলপার কোম্পানি। 

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কিনেছেন একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট। কুষ্টিয়ায় রয়েছে ধানী জমি। জন্মস্থান কুমিল্লাতেও রয়েছে জমি ও বাড়ি। সরকারি চাকরি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এ কর্মচারি এখন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্মচারি ইউনিয়ন ( শ্রমিক লীগ অন্তর্ভূক্ত) সিবিএ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

এতো আর্থিক অনিয়মের খবর সবার জানা থাকলেও তার বিরুদ্ধে এখনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়ে জানতে আপন দেশ-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে দেলোয়ার হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

শূণ্য থেকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ আয়ের মালিক হওয়া দেলোয়ারের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছে আপন দেশ। ধারাবাহিক পর্ব পড়তে  সাথে থাকুন।

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়