Apan Desh | আপন দেশ

ডা. জুবাইদা রহমানের আগমন ঘিরে বিএনপিতে উচ্ছ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ৪ মে ২০২৫

আপডেট: ১৩:৩৮, ৪ মে ২০২৫

ডা. জুবাইদা রহমানের আগমন ঘিরে বিএনপিতে উচ্ছ্বাস

ফাইল ছবি

দেশের ঐতিহ্যবাহি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমান। বাবা সাবেক মন্ত্রী ও নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান। শ্বশুর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, শ্বাশুড়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। স্বামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতগুলো পরিচয়ের পরে তিনি নিজ গুণে গুণান্বিত একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। অত্যন্ত সৎ ও নিরহংকার এ নারীকেও বিগত স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্টের রোষানলে পড়তে হয়েছে। প্রায় দেড় যুগ কাটাতে হয়েছে বিদেশে।

অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরছেন ডা. জুবাইদা রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার (০৬ মে) লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন তিনি। তার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত-উৎফুল্ল এবং আবেগাপ্লুতও। অবশ্য দেশে ফিরে ডা. জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে যুক্ত হবেন কি না, সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিচ্ছন্ন ইমেজের ডা. জুবাইদাকে নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। ফলে তার আগমনে রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা তৈরি করবে। আর রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও দেশে তার উপস্থিতিটাই জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। 

জানা গেছে, ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফিরে এক থেকে দুই মাস ঢাকায় অবস্থান করতে পারেন। মূলত তিনি মা ও শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটাবেন এবং তাদের যত্ন নেবেন। এ সময় তিনি আপাতত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। 

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ডা. জুবাইদা রহমান শুধু জিয়া পরিবারের একজন সদস্যই নন, উনার বাবাও নৌ বাহিনীর প্রধান ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি একজন সম্মানিত মানুষ ছিলেন। তবে কোনো অপরাধ না করেও শুধু ফ্যাসিবাদের আক্রোশের কারণে ডা. জুবাইদা এতদিন স্বদেশে ফিরতে পারেননি।

তিনি বলেন, যখন কোনো পাখিকে খাঁচা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়, তখন তার মধ্যে ওড়ার শক্তি যতটা থাকে, প্রফুল্লতাও থাকে, এর সঙ্গে অনন্তকাল উড়ে চলার একটা স্পৃহাও জাগে। সব কিছু জুবাইদা রহমানের মধ্যে এখন বিদ্যমান। বিদ্যমান বলেই এতদিন পরে হলেও তিনি দেশে আসতে যাচ্ছেন। এতে তিনি যেমন আনন্দিত-উৎফুল্ল, বিএনপির নেতাকর্মীরাও তেমনি উৎফুল্ল হয়েছেন। একই সঙ্গে তাকে বরণ করে নেয়ার জন্যও তারা অপেক্ষা করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ম্যাডামকে সঙ্গ দেয়ার জন্যই মূলত ডা. জুবাইদা রহমান এখন দেশে আসছেন। যেহেতু ম্যাডাম লন্ডন থেকে দীর্ঘ অসুস্থতার চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসছেন, তার সে অসুস্থতা যেন আবার ফিরে না আসে, তিনি যেন সুস্থ থাকতে পারেন, সে বিষয়টি বিবেচনায় শাশুড়িকে যত্ন নেয়ার ব্যাপারটা এখন গুরুত্বপূর্ণ। এটা হয়তো তাদের প্রাইমারি কনসার্ন। তবে পেছনে একটি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা থাকতেও পারে। যেহেতু তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী এবং দীর্ঘদিন পরে দেশে আসছেন, সেক্ষেত্রে তার আগমন ঘিরে দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা প্রাণচাঞ্চল্য আসবে।

ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে যান জুবাইদা রহমান। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণে জুবাইদা রহমান এতদিন দেশে ফিরতে পারেননি। 

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেমন ওয়ান-ইলেভেন ও আওয়ামী সরকারের চক্রান্ত ছিল, মামলা ছিল—তার সহধর্মিণীও এর বাইরে ছিলেন না। দুদকের এক মামলায় ২০২৩ সালে জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। পরে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের ওই সাজা স্থগিত হয়। এরপর অবশেষে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন তিনি।

জুবাইদা রহমানের জন্ম বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তিনি প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মাহবুব আলী খানের মেয়ে। মাহবুব আলী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।

জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরেও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে অভিযোগ বিএনপির।

জুবাইদা রহমান রাজনীতি সচেতন থাকলেও এখনো সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে স্বামী তারেক রহমানের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে গেছেন তিনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় বাবা মাহবুব আলীর মৃত্যুবার্ষিকী এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রামসহ দু-একটি সামাজিক প্রোগ্রামে তাকে দেখা গেছে। তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।

এদিকে ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফেরার পর তার জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকায় অবস্থানকালে ধানমন্ডিতে তার পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন। জিয়া পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে ডা. জুবাইদার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। সে কারণে তার ঢাকাস্থ বাসায় অবস্থানকালীন এবং যাতায়াতের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রত্যাশিত চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে—একজন সশস্ত্র গানম্যান নিয়োগ; গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা; বাসায় পুলিশি পাহারা এবং বাসার প্রবেশপথে আর্চওয়ে স্থাপন।

জানা গেছে, দেশে ফিরে জুবাইদা রহমান প্রথমত শাশুড়ি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় যাবেন। পরে তিনি ধানমন্ডিতে তার পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবন’-এ থাকবেন।

খালেদা জিয়া ও জুবাইদা রহমানকে বরণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে যৌথসভা করেছে দলটি। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপুল জনসমাগম করবেন তারা। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে বেগম জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে নেতাকর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানাবেন।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়