ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবের আলটিমেটামের পর ইয়েমেনে নিজেদের সামরিক মিশন সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি জানিয়েছে, শিগগিরই ইয়েমেন থেকে সব আমিরাতি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। স্থানীয় সময় মঙ্গরবার (৩০ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে আরব আমিরাত। খবর রয়টার্সের।
এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী দক্ষিণ ইয়েমেনের মুকাল্লা বন্দরে হামলা চালায়।
ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) সঙ্গে আমিরাতের আঁতাত এবং এ ইস্যুতে সৌদির সঙ্গে তিক্ততা ও আস্থার সংকটের জেরে মঙ্গলবার আবুধাবির উদ্দেশ্যে আলটিমেটাম দিয়েছিল রিয়াদ। সৌদি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আবুধবাবির সেনাদের ইয়েমেন ত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময়ে দেয়া হয়েছিল।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য আমিরাত থেকে পাঠানো অস্ত্র ও সাঁজোয়া যানবাহী চালানে তারা হামলা চালিয়েছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের এমন ঘষণার পর মঙ্গলবার উত্তেজনা চরমে ওঠে। রিয়াদ হাজরামাউত ও মাহরা থেকে সরে যাওয়ার আহবান জানানোর পর এসটিসির অবস্থানেও বিমান হামলা হয়।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইয়েমেনের পরিস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করা অন্যান্য বিষয় নিয়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
কুয়েত ও বাহরাইনসহ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ জানিয়েছে, তারা সংলাপ জোরদার এবং রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর যে কোনো উদ্যোগকে সমর্থন করবে। কাতার বলেছে, সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের নিরাপত্তা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক বিবৃতিতে আমিরাত সরকার জানিয়েছে, তারা ইয়েমেনে তাদের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করেছে এবং এখন দেশটিতে অবস্থানরত সকল আমিরাতি সেনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) সঙ্গে আমিরাতের ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার বিষয়টি রিয়াদের জন্য চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে আমিরাতের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক তিক্ততা ও আস্থার সংকট গত মঙ্গলবার এক চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন<<>>পুতিনের বাসভবনে ইউক্রেনের হামলা, ট্রাম্প অত্যন্ত ক্ষুব্ধ
পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সৌদি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আবুধাবিকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সেনাদের ইয়েমেন ত্যাগ করতে হবে। সৌদির এই নজিরবিহীন আল্টিমেটাম এবং সরাসরি সামরিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ইয়েমেনে চলমান দীর্ঘ যুদ্ধের সূচনা ঘটে ২০১৪ সালে, যখন ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখলে নেয়।
এর পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল-হাদী সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। হুথিদের প্রতিহত করা এবং হাদীর সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেনি সরকারি বাহিনীর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সামরিক জোট গঠন করা হয়।
২০১৫ সাল থেকে ওই জোট ইয়েমেনে ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে। তবে বহু বছরের সংঘর্ষের পরও হুথিদের সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করা সম্ভব হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জোটের ভেতরেই ক্ষমতার বণ্টন, প্রভাব বিস্তার ও কৌশলগত লক্ষ্য নিয়ে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
২০১৯ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ধীরে ধীরে ইয়েমেন থেকে তাদের সেনা উপস্থিতি কমাতে শুরু করে, যদিও প্রকাশ্যে তারা জোটের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে। একই সময়ে আমিরাত-সমর্থিত দক্ষিণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) দক্ষিণ ইয়েমেনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বিস্তারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই তৎপরতা সৌদি-সমর্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইয়েমেন থেকে আমিরাতের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা যুদ্ধের ময়দানে নতুন বাস্তবতা তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এখন সৌদি আরব এককভাবে এ সংঘাত চালিয়ে যাবে নাকি ভিন্ন কোনো কূটনৈতিক বা সামরিক কৌশল গ্রহণ করবে—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা ও জল্পনা চলছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































