Apan Desh | আপন দেশ

গাজায় নতুন আতঙ্ক হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত বোমা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১১:৫৬, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় নতুন আতঙ্ক হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত বোমা

ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধ থামলেও গাজাবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলাবারুদ। বসত-ভিটার ধ্বংসস্তূপ সরাতে গিয়ে এসবের বিস্ফোরণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হয়েছেন অনেকে। হেগ কনভেনশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব অপসারণে সহায়তায় বাধ্য হলেও তা মানছে না ইসরায়েল।

দখলদার বাহিনী সীমান্তে মানবিক সহায়তা ও ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না দেয়ায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে গাজার বেঁচে থাকা মানুষের জীবনও। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না পারায় গাজা সিটির ধ্বংসস্তূপ সরানো ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন শহরটির মেয়র ইয়াহিয়া আল-সররাজ। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, গোটা গাজাজুড়ে হাজার হাজার টন বিস্ফোরিত না হওয়া ইসরায়েলি বোমা এখন মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে।

রোববার (২৬ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে আল-সররাজ জানান, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক সচল রাখতে ও নতুন কূপ খনন করতে গাজা সিটিতে কমপক্ষে ২৫০টি ভারী যন্ত্রপাতি ও এক হাজার টন সিমেন্টের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।

কিন্তু আল জাজিরার গাজার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, এত বড় চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে গাজায় ঢুকতে পেরেছে। তিনি জানান, প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনি এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, কিন্তু নতুন যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ইসরায়েলি বন্দিদের মৃতদেহ উদ্ধারে, ফিলিস্তিনিদের নয়।

খুদারি বলেন, ফিলিস্তিনিরা জানেন, যতক্ষণ না সব ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেয়া হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতিতে কোনো অগ্রগতি হবে না।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফাহ শহরে এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধার অভিযানে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডকে সহায়তা করতে রেড ক্রসের গাড়ি পৌঁছেছে।

এদিকে রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করতে পারবে তা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা শুধু ইসরায়েলেরই আছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করি। আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জানিয়ে দিয়েছি, গাজায় কোন বাহিনী গ্রহণযোগ্য নয় তা আমরাই নির্ধারণ করব।

তিনি আরও দাবি করেন, এ অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রও মেনে নিয়েছে।

আরও পড়ুন<<>>জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এখন অকার্যকর : ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট

অন্যদিকে গাজার পুনর্গঠনকাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিস্ফোরিত না হওয়া বোমাগুলো। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা হালো ট্রাস্টের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক নিকোলাস টরবেট বলেন, গাজা নগরীর প্রায় প্রতিটি অংশেই বোমা পড়েছে।

তিনি জানান, এমন বহু গোলাবারুদ আছে যা আঘাতের পরই বিস্ফোরিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। এসব বোমা অপসারণে সময় লাগছে, ফলে পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বিলম্বিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো, ছোট পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করে বোমাটিকেই উড়িয়ে দেয়া। তার মতে, এ কাজের জন্য খুব জটিল যন্ত্রপাতির দরকার হয় না; ছোট যান বা হাতে নিয়েও সরঞ্জাম বহন করা সম্ভব।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজায় অন্তত ২ লাখ টন বোমা ফেলেছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন এখনো বিস্ফোরিত হয়নি।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর বিস্ফোরক প্রকৌশল বিভাগের সব সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, গাজাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

গাজার বিস্ফোরক প্রকৌশল বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মেকদাদ বলেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মাঠে নামি। তবে ইসরায়েলি হামলায় আমাদের সব সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ কাজ এগিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এখন চলমান আগ্রাসনের মধ্যেও আমাদের টিম অবিস্ফোরিত অস্ত্র খুঁজে পেতে ও বাসিন্দাদের বিপদমুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এ অবস্থায় পরিত্যক্ত বিস্ফোরক দ্রব্য থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে, জনসচেতনতায় একসঙ্গে কাজ করছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি। প্রচারণার মাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে শিশুসহ সাধারণ বাসিন্দাদের। এমনকি অবিস্ফোরিত বোমা দেখামাত্র ওই স্থানটি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়