ছবি: আপন দেশ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ অমান্য করে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা, হয়রানি ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন এমন অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে একটি ভুক্তভোগী পরিবার।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে বরমী ইউনিয়নের সাহাব উদ্দীন মোড়লের নিজ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে সাহাব উদ্দীন মোড়ল অভিযোগ করেন, বন বিভাগের দায়ের করা গাজীপুর আদালতের দেওয়ানী মামলা নং ১৭১/০৫ এবং দেওয়ানী আপিল মামলা নং ২০২/০৯–এর কার্যকারিতা হাইকোর্ট ডিভিশনের সিভিল রিভিশন মামলা নং ৩৬৯৮/২০২৪-এর মাধ্যমে গত ২০ আগস্ট ২০২৪ থেকে এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। যা পরবর্তীতে আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি হাইকোর্ট উক্ত সম্পত্তির বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন<<>>কালীগঞ্জ পরিদর্শনে ঢাবি’র ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ দল
তিনি বলেন, হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা অমান্য করে গত ০১ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর রেঞ্জের বিট অফিসার মোখলেছুর রহমান, সাতখামার বিটের রেঞ্জার তানভীর আহমেদসহ বন বিভাগের প্রায় ৩০–৪০ জন কর্মকর্তা, বন প্রহরী ও শ্রমিক তিনটি রাইফেলসহ আমাদের দীর্ঘদিনের দখলীয় জমিতে জোরপূর্বক চারা রোপণের চেষ্টা করেন।
বাধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয় এবং গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তার বসতবাড়ির আঙিনা ও আশপাশের কৃষিজমিতে জোরপূর্বক চারা লাগানোর চেষ্টা করা হয়। এমনকি পূর্বে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল বলেও তিনি জানান।
সাহাব উদ্দীন মোড়ল আরও বলেন, স্থানীয় কিছু অসাধু লোকের সহায়তায় বন বিভাগের লোকজন নিয়মিত এসে তাদের জমিতে চাষাবাদে বাধা দিচ্ছে। তাদের নির্মিত ৪–৫টি বসতঘর, গরু ও মুরগির খামার ভেঙে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে, যার ফলে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তিনি জানান, এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর মামলা নং ২০৭৩/২৫ দায়ের করা হয়েছে, যা বর্তমানে পিবিআই তদন্তাধীন। অপরদিকে বন বিভাগ তার ও তার ছেলে জাকির হোসেন মোড়লের বিরুদ্ধে একটি বন মামলা দায়ের করেছে, যাতে তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করে, বিতর্কিত জমিটি তাদের পূর্বপুরুষ আছমত আলী ১৯৪৮ সালে যথাযথভাবে জমিদারদের কাছ থেকে পত্তন গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৯ সালে ঢাকার আদালত থেকে জমিটির সম্পূর্ণ মালিকানার পক্ষে রায় লাভ করেন। তারা নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করলেও বন বিভাগ বেআইনিভাবে জমিটি নিজেদের দাবি করছে।
বর্তমানে আরএস রেকর্ডে বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত হওয়া জমির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দেওয়ানী মামলা নং ৩৯৩/১৬ আদালতে চলমান রয়েছে, যা সাক্ষ্য পর্যায়ে আছে।
ভুক্তভোগী পক্ষ আরও অভিযোগ করে, গত ৯ ডিসেম্বর বন কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, হাইকোর্টের স্ট্যাটাস-কো অমান্য করে সরকারি বনভূমি দখল, বন কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি এবং সরকারি অর্থায়নে সৃজিত বাগানের চারা কেটে বনভূমি পরিষ্কার করে কলাগাছ রোপণের অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন সাহাব উদদীন মোড়ল।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার অবিলম্বে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন, বন বিভাগের হয়রানি বন্ধ এবং তাদের জান-মাল ও সম্মান রক্ষায় প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর বন কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন,আমরা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন কিছু করিনি। আমরা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের আগেই বনভূমিতে চারা লাগিয়েছি। হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশের পর তারাই আদেশ অমান্য করে ওই জমিতে কলাগাছ রোপন করেছে। তখন সরকারি বনভূমি ও সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে আমরা হুমকির মুখে পড়েছি। আমাদের জীবন নিরাপত্তা এবং বনভূমি রক্ষার স্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় অভিযোগ করেছি।
আপন দেশ/এসআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































