Apan Desh | আপন দেশ

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় রাইসা

ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৬ জুলাই ২০২৫

ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় রাইসা

ছবি : আপন দেশ

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহত তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনির (৯) জানাজা ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া দক্ষিনপাড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে বাজড়া শামসুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। 

জানাজায় আলফাডাঙ্গার ইউএনও রাসেল ইকবাল, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন। 

জানা গেছে, উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের পর থেকে নিখোঁজ ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনি (৯)। দুর্ঘটনার পর থেকে রাইসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটির মুখমণ্ডলের অংশবিশেষ দেখে রাইসা হিসেবে দাবি করেন বাবা শাহাবুল শেখ (৪৪)। বাবার দাবির প্রেক্ষিতে সিএমএইচ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে লাশের ডিএনএ সংগ্রহ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ডিএনএ রিপোর্টে রাইসার লাশ সনাক্ত হলে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার সকালে রাইসার লাশ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামে পৌছালে শোকে আশপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সকাল থেকেই নিহত রাইসার বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসীর কান্না এবং মাতম চলছে।  

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাইসা মনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের শাহাবুল শেখ ও মীম আক্তারের মেয়ে। পরিবার পরিজন নিয়ে রাইসার বাবা শাহাবুল শেখ ঢাকার উত্তরা নয়ানগরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শাহাবুল একটি গার্মেন্টস এক্সেসরিস প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। রাইসা মণিরা দুই বোন ও এক ভাই। বোনের মধ্যে রাইসা মেজো। সে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বড় বোন সিনথিয়া (১৪) একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ভাই রাফসান (৪) সবার ছোট। রাইসা মনির বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে-মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়ানোর। উচ্চশিক্ষায় সু-শিক্ষিত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তাকে ভর্তি করেন।  

রাইসার চাচা ইমদাদুল শেখ জানান, এ দুর্ঘটনার পর থেকে রাইসা নিখোঁজ ছিল। আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিভিন্ন স্থানে ও হাসপাতালে খোঁজ খবরের পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে তার লাশের সন্ধান পাই। তার বাবা পুড়ে যাওয়া মুখমণ্ডল দেখে নিখোঁজ মেয়ে রাইসার বাবা শনাক্ত করেন। গত রাতে বাড়িতে এসেছি। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় জানাজা সম্পন্ন করে স্থানীয় কবরাস্থানে লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। 

গোপালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান জানান, রাইসা মনির অকাল মৃত্যুতে পুরো এলাকার মানুষ শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর হ্রদয়-বিদারক দৃশ্যর তৈরি হয়। এমন কোন মানুষ নেই যে মেয়েটির জন্য কেউ কাঁদেনি। 

জানাজায় উপস্থিত আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী রাসেল ইকবাল জানান, উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দূর্ঘটনায় রাইসা মনি মারা যায়। এ শোক সহ্য করার মত না। আল্লাহ পাক যেন তার বাবা-মাকে মেয়ের শোকে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন রাইসা মনির পরিবারের পাশে আছি। আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করবো।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়