Apan Desh | আপন দেশ

রিশাদের নৈপুন্যে উইন্ডিজকে গুড়িয়ে বাংলাদেশের জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

রিশাদের নৈপুন্যে উইন্ডিজকে গুড়িয়ে বাংলাদেশের জয়

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ৬ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক রিশাদ

ওয়ানডে ক্রিকেটে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না বাংলাদেশের। দুবাইয়ে সর্বশেষ সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবতে হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। যে কারণে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে বাজে কথা শুনতে হয়েছে নাঈম শেখদের। তা নিয়ে খোদ কোচকে পর্যন্ত কথা বলতে হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। 

পাহাড় সমান চাপ নিয়েই ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামতে হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজদের। আফগানদের কাছে ধরাশয়ী হওয়ার হতাশা, সমালোচনা-ট্রলের ঝড় আর চারপাশে নেতিবাচকতার হাওয়া। এমন বিরুদ্ধ আবহেও ক্রিকেটের টানে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দেখা গেল হাজার দশেক দর্শক। 

ম্যাচের প্রথম ভাগে তারা গলা ফাটানোর সুযোগ পেলেন কমই। তবে পরের ভাগে তারা উল্লাসের উপলক্ষ্য পেলেন বারবার। রিশাদ হোসেনের যাদুকরী পারফরম্যান্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের কালো রঙের মন্থর, অসমান বাউন্সসম্পন্ন ও টার্নিং পিচে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। 

টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রানে অলআউট হয় তারা। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৯ ওভারে মাত্র ১৩৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ৫ উইকেটের স্বাদ পাওয়া প্রথম ডানহাতি স্পিনার তিনি। স্পিন বোলিংয়ে ৬ উইকেটের কীর্তি আগে ছিল না এদেশের কোনো স্পিনারের।

ক্যারিয়ারের আগের ১১ ওয়ানডেতে এক ম্যাচে দুই উইকেটের বেশি পাননি তিনি। ম্যাচের আগে তুমুল কৌতূহল ছিল কালো রংয়ের উইকেট নিয়ে। ম্যাচের শুরুর দিকে পেসারদের বলে বাউন্স ভালোই ছিল উইকেটে। তবে প্রথম ১০ ওভারেই স্পিনারদের বল টার্ন করা শুরু করে অনেকটা। ম্যাচের বাকি সময়টাতেও স্পিনাররা টার্ন পেয়েছেন অনেক। বাউন্স খুব নিচু হয়নি, তবে বল গ্রিপও করেছে বেশ। সব মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের কাজ ছিল কঠিন। সেখানে ম্যাচের একমাত্র ফিফটি করেন হৃদয়। অভিষেকে ৪৬ রানের ইনিংস আসে মাহিদুল ইসলামের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ তোলে ২০৭ রান।

রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা ভালো হলেও রিশাদের স্পিনে এলোমেলো যায় তাদের ব্যাটিং লাইন আপ। ১১ ওভার আগেই গুটিয়ে যায় তারা ১৩৩ রানে। এক পর্যায়ে তাদের রান ছিল ১ উইকেটে ৭৯। সেখান থেকে ৫৪ রানের মধ্যে হারায় তারা ৯ উইকেট।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) টস হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে খুশিই ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তার হাসি দ্রুতই মিলিয়ে যায় ওপেনারদের ব্যর্থতায় সাম্প্রতিক সময়ের ভরসা সাইফ হাসান (৩) বিদায় নেন দ্বিতীয় ওভারেই। পরের ওভারেই আলগা শটে ফিরে যান ১০ মাস পর ওয়ানডেতে ফেরা সৌম্য সরকার (৪)। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় শুরুতে বাউন্ডারি পেলেও এরপর মন দেন উইকেট আঁকড়ে রাখায়। 

আরও পড়ুন<<>>২০৭ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ!

প্রথম ৫ ওভারে ২৫ রান তোলা দলের পরের ২৫ রান করতে লেগে যায় আরও ১০ ওভারের বেশি। ষষ্ঠ থেকে ২১তম ওভারের মধ্যে বাউন্ডারি আসে স্রেফ একটি। মন্থর শুরু যখন পুষিয়ে দেওয়ার পালা, শান্ত তখন বিদায় নেন ৬৩ বলে ৩২ রান করে। এই জুটির ৭১ রান আসে ১২০ বলে। অভিষিক্ত মাহিদুল ক্রিজে যাওয়ার পর রানের গতি কমে যায় আরও। 

রান বের করার পথই পাচ্ছিলেন না তিনি। অন্য পাশে হৃদয়ও পারছিলেন না সেভাবে ডানা মেলতে। আবার দীর্ঘসময়ের জন্য উধাও হয়ে যায় বাউন্ডারি। ৮৭ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পরই হৃদয় আউট হয়ে যান জাস্টিন গ্রেভসের অনেক বাইরের বল তাড়া করে। প্রথম বাউন্ডারির আগে মাহিদুলের রান ছিল ৪৬ বলে ১৬। পরে একটু গতি বাড়াতে পারেন তিনি। মিরাজের শুরুটা সাবলিল হলেও থেমে যান ১৭ রানে। অনেকটা সময় ধৈর্য ধরে ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে খেই হারান মাহিদুল। রোস্টন চেইসকে স্লগ করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান তিনি ৭৬ বলে ৪৬ করে। এরপর নুরুল হাসান সোহান (৯) দ্রুত ফিরলে আবার একটু বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে রিশাদের ক্যামিও দলকে নিয়ে যায় ২০০ এর কাছে। দুটি ছক্কা মারেন তিনি গ্রেভস ও জেডেন সিলসের বলে।

শেষ ওভারে তানভির ইসলামের ছক্কায় ২০০ পেরিয়ে যায় দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভার মেডেন নেন তাসকিন আহমেদ ও তানভির ইসলাম। দুই ওভারের খরার পর দুই ওভারের বর্ষণ। রান আসে সেখানে ২৮। তাসকিনের ওভারে চার ও ছক্কা মারেন ব্র্যান্ডন কিং। তানভিরকে তিন চার এক ছক্কা মারেন আলিক আথানেজ। 

রানের গতিতে এরপর রাশ টানতে পারে বাংলাদেশের বোলাররা। তবে দ্বাদশ ওভারে জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। এরপরই আথানেজকে (২৭) জুটি জুটি ভাঙেন রিশাদ। দ্বিতীয় উইকেটে আরেকটি জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন কিং ও কেসি কার্টি। সে চেষ্টাও সফল হতে দেননি রিশাদ। দ্বিতীয় শিকার ধরেন তিনি ধুঁকতে থাকা কার্টিকে (৩০ বলে ৯) ফিরিয়ে। 

এরপরই ধসে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। মূল বাধা হয়ে থাকা কিংকে (৪৪) বিদায় করার পর ওই ওভারেই তিনি ফেরান শেরফোন রাদারফোর্ডকে (০)। একটু পরই চেইসকে ফিরিয়ে রিশাদ পূরণ করেন পাঁচ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসও ভেঙে পড়ে দ্রুতই। 

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়