Apan Desh | আপন দেশ

ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বহুল প্রত্যাশিত বৈঠক বিকেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২৫, ১৩ জুন ২০২৫

ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বহুল প্রত্যাশিত বৈঠক বিকেলে

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৯টায় লন্ডনের পার্ক লেন হোটেল ডোরচেস্টারে বহুল প্রত্যাশিত ও আলোচিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের উত্তাপময় রাজনীতি ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের সন্ধিক্ষণে এ বৈঠকের দিকে তা‌কি‌য়ে আছে বাংলাদে‌শের মানুষ। 

বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনা, নির্বাচন নিয়ে জটিলতা এবং সরকার ও অন্যান্য দলের টানাপড়েনের মধ্যে এ বৈঠকটিকে ঘিরে জনমনে তৈরি হয়েছে প্রবল কৌতূহল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বৈঠক ফলপ্রসূ হবে। এর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরো নিবিড় হবে। একই সঙ্গে অনিশ্চয়তায় থাকা বিভিন্ন জাতীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে এ বৈঠকের মাধ্যমে। 

বৈঠ‌ক থেকে আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব‌্য তা‌রিখ নিয়ে ঐক‌মত্যে পৌঁছাবেন দুই নেতা, এমন প্রত‌্যাশা সবার। এক‌টি সূত্র জানিয়েছে, দুই জনের মধ্যে বৈঠ‌কের শেষ পর্যা‌য়ে দুই পক্ষ থেকে দুই বা তিন জন যুক্ত হ‌তে পা‌রেন। এখন পর্যন্ত দুই জ‌নের ম‌ধ্যে বৈঠকটি শুরু হওয়ার প্রস্তু‌তি রাখা হ‌য়ে‌ছে। 

সূত্র আরও জানায়, ফেব্রুয়ারি‌তে নির্বাচন আ‌য়োজন নি‌য়ে প্রধান উপ‌দেষ্টা সম্মত হলে তাতে মত দিতে পারে বিএন‌পিও। তারেক রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনও সরকার প্রধানের সঙ্গে এটিই প্রথম বৈঠক।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ভি‌ডিও ব্রিফিংয়ে বলেন, এ বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের সামনের রাজনৈতিক বাস্তবতার জন‌্য। একজন বাংলাদে‌শের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, অন‌্যজন দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দ‌লের প্রধ‌ান। তারা সব‌ কিছু নিয়েই আলাপ করবেন। মি‌টিংয়ের প্রস্তু‌তি হিসেবে বিএন‌পির পক্ষ থে‌কে বৃহস্পতিবার একজন অফিসিয়ালও এসেছিলেন, তার সঙ্গেও কথা হ‌য়ে‌ছে।

তি‌নি আরও বলেন, আমরা আশা কর‌ছি সকাল ৯টার মধ্যেই উনারা আসবেন। আসার পরে ওয়ান টু ওয়ান মি‌টিং হ‌বে। উনারা য‌দি  মনে করেন আর কেউ থাকবেন, সেটা উনারাই ঠিক করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বুধবার (১১ জুন) লন্ডনে পৌঁছেছেন। খবরটি স্যোশাল মি‌ডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর প্রধান উপ‌দেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএন‌পির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম‌্যান তা‌রেক রহমা‌নের বৈঠক ওয়ান টু ওয়ান হ‌বে না‌কি দুই প‌ক্ষেই আরও এক বা দুই জন ক‌রে থাক‌তে পা‌রেন তা নি‌য়ে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়।

কেউ বলছেন, পুরো বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার এবং ‘ওয়ান টু ওয়ান’ হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বৈঠকের একপর্যায়ে কিছু সময়ের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একান্তে আলাপ করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি কীভাবে হবে, সেটি এখন দেখার বিষয়। 

আলোচনার এজেন্ডা অফিশিয়ালি কোনো পক্ষ প্রকাশ করেনি। তবে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন, বিচার, সংস্কারসহ রাজনীতিতে সাম্প্রতিক যুক্ত হওয়া অনেক বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিদেনপক্ষে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নিয়ে আসা অন্যতম এজেন্ডা হিসাবে তুলে ধরা হবে। এটি একরকম নিশ্চিত। বিপরীতে সরকার চাইবে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময়সীমা ধরে রেখে সংস্কার ও বিচারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরভেজ ম‌ল্লিক বলেন, সাধারণ মানু‌ষের প্রত‌্যাশা ওয়ান টু ওয়ান মি‌টিং হোক। ওয়ান টু ওয়ান মি‌টিং হওয়ারই সম্ভাবনা। এক প্রশ্নের জবা‌বে তিনি বলেন, সরকার যেহেতু আমন্ত্রণ জা‌নি‌য়েছে মি‌টিংয়ের পর সরকা‌রের পক্ষ থে‌কেই মি‌টিংয়ের ফলাফল জানানো হ‌বে।

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিছবাউজ্জামান সো‌হেল বলেন, এখন পর্যন্ত যতটুকু জা‌নি তাদের দুই জ‌নের মধ্যেই বৈঠক হ‌বে। যদি সরকারের পক্ষ থে‌কে অন‌্য কেউ থা‌কেন বা প্রয়োজন অথবা প্রেক্ষাপট তৈরি হয় বিএনপির পক্ষ থে‌কে সে কারণেই হয়তো আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী লন্ডনে এসেছেন।

তিনি আ‌রও জানান, সভাস্থলের বাইরে সভাকে স্বাগত জানাতে অন্তত হাজ‌ার খানেক নেতাকর্মী জড়ো হবেন।

সূত্র বলছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রাসঙ্গিকতা, জুলাই সনদ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ, নির্বাচন কমিশন, আদালতের রায়ের পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ কাঠামো, রাখাইনে মানবিক করিডর, বন্দরব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসবে।

এছাড়া এর বাইরে জাতীয় নিরাপত্তা, পরবর্তী সরকার ও সংসদ এবং ভূরাজনৈতিক নানা বিষয় বাস্তবতার প্রয়োজনে আলোচনায় যুক্ত হতে পারে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ মানুষ আলোচনা শেষে দুই প্রধান আলোচকের মুখে শেষ হাসি দেখতে চান। যে হাসির উচ্ছ্বাস বলে দেবে মতবিরোধ যাই হোক না কেন-আলোচনায় শেষ পর্যন্ত জনগণ জিতেছে। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়