
মো. নূরুল ইসলাম
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে এ মামলা (নং-৩১) দায়ের করেন। সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এর সহকারী পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম মামলাটি রেকর্ড করেন। নুরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ডোনার হিসেবে পরিচিত।
মামলার এজাহারে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়, মো. নূরুল ইসলাম জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করে নিজের ভোগদখলে রেখেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উক্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তা তদন্তে বের করা হবে। দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন<<>> ব্যাংক লুটছেই নোমান গ্রুপ
এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আসামি নূরুল ইসলাম নিজ নামে ঢাকার গুলশান আবাসিক এলাকায় সার্কেল-২ এর বাড়ি নং-১৯ (অর্ধেকাংশ), রোড-৪৪, ব্লক-সি, ডব্লিউএন(বি), গুলশান-২ (স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম আধুনগর হরিনা, ঘাটিয়াপাড়া, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম), পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে সাতটি প্লটসহ অর্জিত স্থাবর সম্পদের মূল্য ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৮ হাজার ৪৯৯ টাকা। এছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি’র শেয়ার মূল্য ৮ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার ৪৫০ টাকা এবং নোমান গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মূল্য ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। সবমিলিয়ে অস্থাবর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ৮১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯ টাকা। অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৬২ কোটি ২১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬৮ টাকা।
২০২৪-২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী তার দায়দেনা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফলে দায়দেনা বাদ দিলে তার নীট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৮ টাকা।
আসামি নূরুল ইসলামের নামে ২০১৬-১৭ করবর্ষে প্রদর্শিত নীট সম্পদ ছিল ৪৫ কোটি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৩ টাকা। ২০১৬-১৭ করবর্ষ পর্যন্ত তার মোট আয় বিবেচনায় রেখে ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত তার মোট গ্রহণযোগ্য আয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার ৩৭৪ টাকা। ওই সময়ে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৬ টাকা। এতে সঞ্চয়/অবৈধ উৎসের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৮ টাকা।
আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের তদন্তে দুদক: ২১শ’ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন, ৭১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ-পাচার
এভাবে নূরুল ইসলামের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। যা তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জন করে নিজের ভোগদখলে রেখেছেন। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজাহারে ঘটনা সময় ধরা হয়েছে ১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত।
নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগী হিসেবে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যায় অর্থ যোগান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা আমলে সরকারের আনুকূল্যে বিরোধপূর্ণ সম্পত্তি এবং নামমাত্র মূল্যের জমি বন্ধক রেখে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে দুদকে পৃথক ১৩টি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এসব অনুসন্ধানে নূরুল ইসলামের স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, নাতি এবং প্রতিষ্ঠানটির বেতনভুক্ত কর্মচারিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।