
খাদ্যাভাবে চরম অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশু গাজার একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। ছবি: আল-জাজিরার প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট
ছোট্ট দেহের প্রায় সব হাড় দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কঙ্কালের ওপর শুধু চামড়াটাই রয়ে গেছে। গাজায় খাদ্যাভাব কতটা তীব্র পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এ শিশুরা।
ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অনাহার ও অপুষ্টিতে ফিলিস্তিনের গাজায় অন্তত ৬৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। এ জন্য তারা ইসরায়েলের কঠোর অবরোধকে দায়ী করেছে।
গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে উপত্যকাটিতে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি খাবার, পানি ও ওষুধের মতো জীবনরক্ষাকারী ত্রাণের প্রবেশেও বাধা দেয়া হচ্ছে।
গতকাল শনিবার গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী অবরোধকে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার বেসামরিক মানুষকে নির্মূল করতে ইসরায়েল যে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, সেটা এখন দিবালোকের মতো সত্য।
আরও পড়ুন>>>গাজায় নৃশংস গণহত্যায় মেতেছে ইসরায়েল, নিহত আরও ৮১ ফিলিস্তিনি
গাজা উপত্যকায় চলমান পরিস্থিতিকে এ কার্যালয় ‘শৈশবের বিরুদ্ধে চলমান অপরাধ’ বলে বর্ণনা করে এর নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুধা, রোগ ও ধীরে ধীরে মৃত্যুর শিকার হওয়া শিশুদের দুর্দশা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের লজ্জাজনক নীরবতার তীব্র সমালোচনা করেছে তারা।
ইউনিসেফ বলেছে, এ সংখ্যা এপ্রিল মাসে ভর্তি হওয়া ৩ হাজার ৪৪৪ শিশুর তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি, আর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল। যে কারণে সে সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ত্রাণসহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
বিবৃতিতে কার্যালয় এ বিপর্যয়ের জন্য ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের দায়ী করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। পাশাপাশি জাতিসংঘকে অবিলম্বে গাজার সীমান্তপথগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানানো হয়েছে।
এ বিবৃতির কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছিল, গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ‘উদ্বেগজনক হারে’ বাড়ছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, শুধু মে মাসে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী অন্তত ৫ হাজার ১১৯ শিশুকে তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রতিটি ঘটনা (ক্ষুধায় মৃত্যু) প্রতিরোধযোগ্য। তাদের কাছে অত্যাবশ্যক খাবার, পানি ও পুষ্টি চিকিৎসা পৌঁছে দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতে মানুষ মারা যাচ্ছে। ইসরায়েলকে জরুরি ভিত্তিতে সব সীমান্তপথ দিয়ে ব্যাপক পরিমাণ জীবনরক্ষাকারী সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে।
এডওয়ার্ড বেইগবেদার, ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক
ইউনিসেফ আরও বলেছে, এ সংখ্যা এপ্রিল মাসে ভর্তি হওয়া ৩ হাজার ৪৪৪ শিশুর তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি, আর ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল। এতে সে সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ত্রাণসহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক এডওয়ার্ড বেইগবেদার বলেন, শুধু এ বছর মে পর্যন্ত মাত্র ১৫০ দিনে গাজা উপত্যকায় ১৬ হাজার ৭৩৬ শিশুকে অপুষ্টির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে; যা গড়ে দিনে ১১২টি শিশু।
অথচ শিশুদের এ দুর্দশা ও মৃত্যুর মিছিল খুব সহজে থামানো সম্ভব বলে মনে করেন বেইগবেদার। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘটনা প্রতিরোধযোগ্য। তাদের কাছে অত্যাবশ্যক খাবার, পানি ও পুষ্টি চিকিৎসা পৌঁছে দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এতে মানুষ মারা যাচ্ছে। ইসরায়েলকে জরুরি ভিত্তিতে সব সীমান্তপথ দিয়ে ব্যাপক পরিমাণ জীবনরক্ষাকারী সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে।
শিশুদের অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করে শনিবার যখন এসব কথা বলা হচ্ছিল তখন ইসরায়েলের হামলায় এক দিনে ৬০ জন নিহত হওয়ার শোক করছিলেন ফিলিস্তিনিরা।
গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় দুই দফায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে অন্তত ৯টি শিশু।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।