Apan Desh | আপন দেশ

অমুসলিমের হক নষ্ট করলে যে পরিণতি

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

অমুসলিমের হক নষ্ট করলে যে পরিণতি

প্রতীকী ছবি

অন্যায়ভাবে মানুষের হক খাওয়ার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। অনেকে নামাজ-রোজা আদায় করলেও অন্যের হক নষ্ট করছে—যা পরকালে চরম শাস্তির কারণ হবে।

কোনো মুসলমান যদি জীবিত অবস্থায় কোনো কাফের বা অমুসলিমের হক নষ্ট করে এবং সে হক পরিশোধ না করেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সে কাফের ব্যক্তিটি তার নষ্ট হওয়া হক কীভাবে আদায় করবে?’

ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যেখানে ন্যায় ও মানবতার মর্যাদা সবকিছুর ওপরে। মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম—সবার হক রক্ষা করার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত কঠোর। আল্লাহ তাআলা দয়া করেন, ক্ষমা করেন কিন্তু মানুষের ওপর করা অন্যায়ের বিচার তিনি নিজ দায়িত্বে নেন না; ওই ব্যক্তিকেই হকের প্রতিদান দেয়া হবে। তাই দুনিয়াতে যাকে ছোট মনে হয়—অবিচার হলেও তা আল্লাহর দরবারে পাহাড়সম ওজন নিয়ে হাজির হবে।

এ কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম নেয়— ‘কোনো মুসলমান জীবিত অবস্থায় কোনো কাফেরের হক নষ্ট করলে এবং তা পরিশোধ না করেই মারা গেলে, কেয়ামতের দিন সে কাফের কীভাবে তার হক আদায় পাবে?’

ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে—হক নষ্ট করা কেয়ামতের বড় শাস্তির কারণ। মুসলমান হোক কিংবা অমুসলিম, কারো ক্ষতি করলে কেয়ামতের দিন তার প্রতিদান নিতেই হবে। এ প্রসঙ্গে কুরআনের দলিল— وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

তোমার প্রভু কাউকে সামান্যতমও জুলুম করেন না। (সুরা কাহাফ: আয়াত ৪৯)

এ আয়াত প্রমাণ করে— আল্লাহ কারও হক নষ্ট হতে দেন না; অমুসলিম হলেও তার ন্যায্য প্রাপ্য তাকে দেয়া হবে।

হাদিসের দলিল
কেয়ামতের দিন অন্যায়কারীর পক্ষ থেকে প্রতিদান আদায় হবে। এ বিষয়টি হাদিসে পাকে এভাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে— হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— لَتُؤَدَّنَّ الْحُقُوقُ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ

আরও পড়ুন<<>>বিনা কারণে কুকুর-বিড়াল হত্যায় ইসলাম কী বলে?

কেয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায় করা হবে, এমনকি যে বকরির শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরি থেকে বিনিময় আদায় করে দেয়া হবে। (মুসলিম ২৫৮২, তিরমিজি ২৪২০, তারগীব ৩৬০৩, আদাবুল মুফরাদ ১৩৬, মুসনাদে আহমাদ ৭২০৪, ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, বায়হাকি ১১৮৩৯, মিশকাত ৫১২৮)

হাদিসটি সাধারণ; এখানে মুসলমান বা কাফের আলাদা করা হয়নি। অর্থাৎ কার হক নষ্ট হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়—হক তো হকই।

হকের প্রতিদান নেয়ার পদ্ধতি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ

যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি ২৪৪৯)

এখানে কোনো মুসলমান–অমুসলিম পার্থক্য নেই। তাই কাফেরের হক নষ্ট করলেও একই বিচার হবে।

সুতরাং যে মুসলমান কাফেরের হক মেরে দিলো এবং দুনিয়াতে তা পরিশোধ না করেই মারা গেল— কেয়ামতের ময়দানে তার নেক আমল থেকে সে কাফেরকে প্রতিদান দেয়া হবে। যদি নেক আমল না থাকে, তবে কাফেরের গুনাহ তার (মুসলমানের) ওপর চাপানো হবে। আল্লাহ ন্যায়বিচার করবেন এবং কারও কোনো হক নষ্ট হতে দেবেন না।

ইসলামে ন্যায়বিচার এমন এক মৌলিক মূল্যবোধ, যা মুসলিম–অমুসলিম সবার জন্য সমান। মানুষের হক নষ্ট করার পরিণাম খুব ভয়াবহ—কবর, হিসাব, দোজখ—সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত হতে পারে। তাই দুনিয়াতেই যার হক আছে, তাকে ফিরিয়ে দেয়া শ্রেয়; মৃত্যু এসে গেলে আর সুযোগ থাকে না। অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত—সবার হক আদায় করা, কারও প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার না করা, কারণ আল্লাহর দরবারে কারও কোনো হক নষ্ট হয় না।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়