Apan Desh | আপন দেশ

ঢাকায় ধারাবাহিক ভূ-কম্পনে বড় ধাক্কার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২২ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকায় ধারাবাহিক ভূ-কম্পনে বড় ধাক্কার শঙ্কা

প্রতীকী ছবি

একদিনে তিনবারসহ ৩১ ঘণ্টায় চার ভূমিকম্পে আতঙ্কে দেশবাসী। সবগুলোই মধ্যম মাত্রার হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাবডাকশন জোনে জমে থাকা শক্তির অল্প অংশই নির্গত হয়েছে, যা বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ায়। নরসিংদী-ঢাকা এলাকায় ফল্ট সক্রিয় হয়ে নড়াচড়া শুরু করেছে। অতীতের রেকর্ডও বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি ইঙ্গিত করছে।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে একদিনে তিনবার ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে ঢাকায় শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধায় দুটি ও সকালে একটি এবং শুক্রবার সকালে একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

চারটি ভূমিকম্পের মধ্যে সবগুলো ছিল মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালের ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। এদিন সন্ধায় অনুভূত হওয়া দুটি ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭ ও ৪ দশমিক ৩। এসব ভূমিকম্পকে ফোরশক না আফটার শক বলা হবে, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত বিশেষজ্ঞরা।

সাম্প্রতিক এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা এবং এর আশেপাশের স্থানে। তারমধ্যে তিনটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলায় এবং একটির উৎপত্তি ঢাকার বাড্ডায় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এসব ভূমিকম্প জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। শুক্রবারের ভূমিকম্পে সারাদেশজুড়ে দশ জন মানুষ মারা যান। আহত হন ছয় শতাধিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ভূমিকম্প হলে তার ধাক্কা সামলানোর সক্ষমতা রাজধানী ঢাকার নেই। ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ভূমিকম্পে ক্ষতির ঝুঁকিও বেশি। তাই বড় কোনো ভূমিকম্প হলে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে ঢাকা। পড়তে পারে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ১০০ থেকে ১২৫ বছর পরপর এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পরপর আসার সম্ভাবনা থাকে। ১৯৩০ সালের পর দেশে বড় ভূমিকম্প না হওয়ায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন<<>> ভূমিকম্পের আগে-পরে করণীয়

আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবাইয়াত কবির গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। ইন্ডিয়ান ও ইউরোশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে এর অবস্থান। আমাদের এখানে আসাম ফল্ট, ডাউকি ফল্ট ও উত্তর-পূর্বে মিয়ানমারের সেগাইং ফল্টের মতো চ্যুতি রয়েছে। এ কারণে আমাদের এখানে বিভিন্ন সময় কম-বেশি ভূমিকম্প হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেও আমাদের এখানে বড় ভূমিকম্প হওয়ার রেকর্ড আছে। এ ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশে হয়, কিন্তু আজকের ভূমিকম্পের মাত্রা হয়তো একটু বেশি ছিল।

বার বার হওয়া এসব ভূমিকম্পের বিষয়ে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার গণমাধ্যমকে জানান, যদি ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হতো, তাহলে আফটার শকগুলো (পরাঘাত) নিয়ে উদ্বেগের কিছু ছিল না। তবে তিনি হিসাব করে দেখেছেন, যে পরিমাণ ভূমিকম্পের শক্তি সাবডাকশন জোনে (দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, তার ১ শতাংশের কম নির্গত হয়েছে। ফলে বারবার হওয়া এ ভূকম্পগুলো বড় একটি ভূমিকম্পের পথ খুলে দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, ভূ-অভ্যন্তরের যে ফাটল বা ফল্ট লাইনটি এত দিন ধরে প্রচণ্ড চাপে একে অপরের সঙ্গে আটকে ছিল, তা নড়তে শুরু করেছে এবং শক্তি নির্গমনের একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এমন আফটার শক হতে হতে বড় ভূমিকম্প হবে। সেটা খুবই নিকটে হতে পারে।

আরও পড়ুন<<>> ভূমিকম্পে মেট্রোরেলের টাইলস প্লাস্টারে ফাটল

সাম্প্রতিক এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং বার্মা প্লেট। তার মতে, নরসিংদীর মাধবদীতে ভূমিকম্পের উৎস হল এ দুই প্লেটের একটি অপরটির নিচে তলিয়ে যাওয়া সাবডাকশান জোনের সংযোগস্থল। তাই নরসিংদীতে ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের এ অঞ্চলে আগেও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, এমনকি ভূমিকম্পে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে সেগুলো ছিল সিলেট ও চট্টগ্রাম এ দুটো উৎসের বাইরে।

এ ধরনের ভূমিকম্পে ১৭৯৭ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ বদলে গেছে। এখনকার মেঘনা নদী এক সময় লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হতো। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে এ নদীর গতিপথও পরিবর্তিত হয়ে ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে বর্তমান অবস্থানে সরে আসে।

১৭৬২ সালে টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার উপরে উঠে আসে। সিলেটের মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ এই অঞ্চলে ১৯২২ সালে হয়েছিল ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প। এর আগে ১৮৬৮ সালে ঐ অঞ্চলে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ডাউকি ফল্ট যে অঞ্চলে সে জৈন্তাপুর-সুনামগঞ্জে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ
SS Power

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়