Apan Desh | আপন দেশ

নান্দাইলে বিএনপির প্রার্থী দেখে খুশি জামায়াত

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৮:১৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

নান্দাইলে বিএনপির প্রার্থী দেখে খুশি জামায়াত

ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী ইয়াসের খান চৌধুরী ও বিক্ষোভকারী (ইনসেটে)। ছবি: আপন দেশ

ময়মনসিংহ জেলার উপজেলা শহর নান্দাইল। সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-৯। এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন ইয়াসের খান চৌধুরী। লন্ডন প্রবাসী এ বিএনপি নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত। অন্যদিকে ক্ষোভে ফুসছেন বিএনপির ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। হাইব্রিড প্রার্থী বদলের দাবিতে টানা বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনুসারীরা।

নান্দাইল বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ইয়াসের খান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করে আসছিলেন। বিগত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের পুরো সময় তিনি লন্ডনে ছিলেন। ২০২৪ সালে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে চিকিৎসার কথা বলে থাইল্যান্ডে অবস্থান করেন। তখন এলাকায় নেতাকর্মীদের বলতেন-তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।

এদিকে চলতি বছরের শুরুতে অদৃশ্য শক্তির জোরে লন্ডনে বসেই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক হন। নান্দাইল বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে এলাকায় ঢুকতে পারেননি। পুলিশ পাহারায় নিজ বাড়িতে নতুন কমিটির সংবর্ধনার আয়োজন করেও ব্যর্থ হন। বিএনপির নেতাদের বিক্ষোভে মুখে এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে যান। দলীয় বড় কোনো কর্মসূচি ছাড়া এলাকায় যান না। ঢাকায় অবস্থান করেন।

গত ৪ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সাতদিন পর তিনি এলাকায় যান। মনোনয়ন বঞ্চিত অন্য নেতাদের অনুসারীদের প্রতিবাদের মুখে এলাকায় যেতে সাহস পাননি। জনসম্পৃক্তাহীন এ নেতার মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকাবাসী হতবাক। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন লন্ডনে বসবাস করায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইয়াসের খানের যোগাযোগ নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাকে সেভাবে চেনেনও না। এলাকায় অবস্থান নেই। উল্টো দায়িত্ব পেয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পদ দিয়ে পুনর্বাসন করেছেন। সেকারণে ভোটের মাঠে অনেকটা নির্ভার জামায়াত প্রার্থী। কারণ আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এ আসনে দীর্ঘদিন প্রচারণা চালিয়ে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন। তাই জামায়াতের প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে হলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকা নেতাকে ধানের শীষ নিয়ে লড়তে হবে। না হলে আসন জামায়াতের প্রার্থীর কাছে হাতছাড়া হতে হবে।

ময়মনসিংহ-৯ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী বদলের দাবিতে বিএন পির বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। ছবি: সংগৃহীত

এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে মনোনয়ন পেতে মাঠে সক্রিয় ছিলেন ছয়জন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নান্দাইল আসনের মনোনয়ন চেয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন ছয় জন নেতা। তারা হলেন-ময়মনসিংহ উত্তর জেলার সদস্য ও নান্দাইল উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী, উত্তর জেলা সদস্য ও নান্দাইল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রনেতা মামুন বিন আব্দুল মান্নান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামসুল ইসলাম শামস সূর্য, উত্তর জেলা ও নান্দাইল উপজেলা বিএনপির সদস্য নাসের খান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী এরশাদুল করিম আরমান।

এরমধ্যে টানা ১৬ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে নান্দাইলে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মামুন বিন আবদুল মান্নান। করোনাকালে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে সহায়তা দেন তিনি। হাসিনা বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান। তিনি নান্দাইল উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি বাজার ও গ্রামে গণসংযোগ করেছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। এছাড়া তিনি ১০৫১ মসজিদের ইমাম, ১৭৭টি প্রাইমারি স্কুল, ৪৪টি হাইস্কুল, ৩৩টি মাদরাসা, ও ৬ কলেজপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাতা বিতরণ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে তাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে দিন দিন।

৫০ বছরের তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩, ’৮৬, ’৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। ১৯৭৮, ’৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্তী জয়লাভ করে। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

২০১৮ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী, ইয়াসের খান চৌধুরী ও মামুন বিন আবদুল মান্নান। তখন মনোনয়ন পেয়েছিলেন খুররম খান।

এদিকে ইয়াসের খান মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে টানা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন বঞ্চিত চারজন একত্রিত হয়ে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে গত ১২ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর চিঠি দিয়েছেন। গত সোমবারও নান্দাইল উপজেলা সদরে বিক্ষোভ ও মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন তারা। এতে শত শত দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নেন। এসময় তারা বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী ইসের খান চৌধুরীর মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করেন।

তারা বলেন, আমরা চাই দলের দুঃসময়ে যারা পাশে ছিল, যারা বিএপির দুর্দিনে হাল ধরেছিল, তাদের যে কেউ আসুক আমরা ধানের শীষ বিজয়ী করব। অন্যথায় আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপ্রিয়ভাবে আমাদের আন্দোলন চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।

কাকে মনোনীত করলে বিজয় অর্জন করা যাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা জানান, ক্লিন ইমেজ ও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য মামুন বিন আবদুল মান্নানকে মনোনয়ন দিলে সকল নেতাকর্মী নিয়ে একত্রে মিলে-মিশে কাজ করতে পারবে। যাকে নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ
SS Power

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়