ছবি : আপন দেশ
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি পৃথিবীর ভূত্বকের হঠাৎ কম্পনের ফলে ঘটে, যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির কারণ হতে পারে। অন্যান্য অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস থাকলেও, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া কঠিন, যার কারণে এর ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হতে পারে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বেশিরভাগ স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সকাল ১০টা ৩৮ থেকে ১০টা ৩৯ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে সারাদেশ। এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। এটি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজম্যান্ট ও ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ড. দিলারা জাহিদ জানান, ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে বাংলাদেশে ভূমিকম্প হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভূমিকম্প হলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নিজের ক্ষতি করে বেশি। ভূমিকম্প বিষয়ে আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই সচেতনতার অভাব পূরণ করতে পারলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতো।
ভূমিকম্পের সময় যা করণীয়
ভূমিকম্প বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। যতটুকু সময় স্থায়ী হয় ততক্ষণে আতঙ্কিত হয়ে ভুলভাল কিছু করা যাবে না। বরং নিজেকে শান্ত রাখতে হবে এবং পরিবারের সবাইকে বারবার সতর্ক করে দিতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনি যদি বাড়ির ভেতর থাকেন
ড্রপ, কাভার ও হোল্ড অন পদ্ধতিতে মেঝেতে বসে পড়ুন, কোনো মজবুত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং কিছুক্ষণ বসে থাকুন।
হেলমেট পরে বা হাত দিয়ে ঢেকে মাথাকে আঘাত থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করুন।
বিছানায় থাকলে মাথা বাঁচাতে বালিশ ব্যবহার করুন। ঘরের ভেতরের দিকের দেয়ালের কাছে বসে আশ্রয় নিতে পারেন।
বাড়ির বাইরের দিকে থাকা দেয়াল বা কাচের জানালা বিপজ্জনক। ভূমিকম্পের সময় যতটা সম্ভব এমন জায়গা থেকে দূরে থাকুন।
সুইচের সামনে থাকলে ফ্যান বা বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র বন্ধ করে দিন।
রান্নাঘরে চুলা চালু থাকলে বন্ধ করুন।
বহুতল ভবনের ওপরের দিকে অবস্থান করলে ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকাই ভালো।
ভূমিকম্প থামলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামুন।
নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামুন।
পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি কেনপুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি কেন
আরও পড়ুন<<>>ভূমিকম্পে রাজধানীতে নিহত ৩, আহত অনেক
বাড়ির বাইরে থাকলে
খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন। বহুতল ভবনের প্রান্তভাগের নিচে বা পাহাড়-পর্বতের নিচে কোনোভাবেই দাঁড়াবেন না। ওপর থেকে খণ্ড পড়ে আহত হতে পারেন।
লাইটপোস্ট, বিল্ডিং, ভারী গাছ অথবা বৈদ্যুতিক তার ও পোলের নিচে দাঁড়াবেন না।
রাস্তায় ছোটাছুটি করবেন না। মাথার ওপর কাচের টুকরো, ল্যাম্পপোস্ট অথবা বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে দ্রুত গাড়ি খোলা জায়গায় পার্ক করুন।
ব্রিজ, ফ্লাইওভারে ভূমিকম্পের সময় থামবেন না। বহুতল ভবন কিংবা বিপজ্জনক স্থাপনা থেকে দূরে গাড়ি থামান।
ভূমিকম্পের পর যা করবেন
ভূমিকম্প শেষ হয়ে গেলেও কিছু করার থাকে। এসব বিষয়েও সতর্কতা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক:
ভূমিকম্প শেষ হলেও আরো কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। বড় ভূমিকম্পের পর আরো কিছু ছোট ভূকম্পন হবার সম্ভাবনা থাকে।
কম্পন থেমে গেলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর বের হোন। ওপর থেকে ঝুলন্ত জিনিসপত্র কিছুক্ষণ পরও পড়তে পারে। বিশেষত নির্মাণাধীন ভবনের সামনে কোনোভাবেই আশ্রয় নেবেন না।
ভূমিকম্প থামার পর তড়িঘড়ি করে বের হবেন না। পরিবারের সবাই নিরাপদ আছে কি-না, তাদের মানসিক অবস্থা কেমন তা জিজ্ঞেস করুন। তারপর চারদিকে পর্যবেক্ষণ করুন ঘরের অবস্থা কেমন।
গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ পেলে জানালা খুলে বের হয়ে যান এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন। ফ্যান সঙ্গে সঙ্গে ছাড়ার প্রয়োজন নেই।
কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে মেইন সুইচ বা ফিউজ বন্ধ করে দিন। ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে সাবধান থাকুন। যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে। অবস্থা স্বাভাবিক হলে একজন ইলেকট্রিশিয়ান এনে চেক করান।
আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখুন। ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর রাখুন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।





































