Apan Desh | আপন দেশ

আজ আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১১ অক্টোবর ২০২৫

আজ আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস

ফাইল ছবি

আজ ১১ অক্টোবর (শনিবার), আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস। প্রতিবছর এ দিনে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। দিবসটি মেয়েদের দিন হিসেবেও পরিচিত। এবার কন্যাশিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আমি সে মেয়ে, আমিই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিই : সংকটের সামনের সারিতে মেয়েরা’।

আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বজুড়ে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র সমূহ হলো- শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক তথা বাল্যবিবাহ। 

জানা যায়, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নামের বেসরকারি অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠ-পোষকতাতে একটি প্রকল্প রূপে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের জন্ম হয়েছিল। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ‘কারণ আমি একজন মেয়ে’ (Because I Am a Girl) নামক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে এই দিবসের ধারণা জাগ্রত হয়েছিল। এই আন্দোলনের মূল কার্যসূচী হলো বিশ্বজুড়ে কন্যার পরিপুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই সংস্থার কানাডার কর্মচারীরা সকলে এই আন্দোলনকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে কানাডা সরকারের সহায়তা নেয়।
 
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসটি প্রথম পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে কানাডা। এ দেশটিই প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। আর তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস।

সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসেই কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৯৩টি কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৫০টি, আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৩ জনকে। বিভিন্ন ঘটনায় মোট ৮১ জন কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এছাড়া বহু কন্যাশিশু পাচার, যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্ত ও বাল্যবিবাহের মতো নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

আরও পড়ুন<<>>শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদোকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৯০ কন্যাশিশু। অথচ ২০২৪ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২২৪ জন। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ।

পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৫৯টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। তবে তার মধ্যে কন্যাশিশু নির্দিষ্টভাবে কত, সে হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।

এছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মাত্র নয় মাসে ৪৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৬ জনের বয়সই ছয় বছরের নিচে। এ ভয়াবহ চিত্র দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে মূলত বিচারহীনতার কারণে। অপরাধীরা শাস্তি না পেয়ে বারবার একই অপরাধ করতে সাহস পাচ্ছে।

একদিকে রাষ্ট্র কন্যাশিশুর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলছে, অন্যদিকে প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা ভরে উঠছে তাদের ওপর ভয়ংকর সহিংসতার খবরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু দিবস পালন নয়, কন্যাশিশুদের বাস্তব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বিচারপ্রক্রিয়া গতিশীল করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার এবং সমাজজুড়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়