
প্রতীকী ছবি
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের এক বছর পেরোতেই আবারও দেশে ‘জঙ্গি নাটক’ শুরু হয়েছে। এটি সে নাটকেরই পুনরাবৃত্তি যেটা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলেছিল। তখন ‘জঙ্গিবাদ’ দমনের নামে নিরপরাধ আলেম-উলামাদের হয়রানি করা হয়েছে। আর এ নাটকের সহযোগী ছিল সরকারের পৃষ্ঠপোষক কিছু হলুদ মিডিয়া।
এ মিডিয়ার উদ্দেশ্য, ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোকে দমন করা। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ-প্রবণ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা। এ অভিযোগ করেছে দেশের ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশে ‘জঙ্গিবাদ’ ইস্যু বানিয়ে আলেম সমাজকে টার্গেট করা হতো। তিনি ক্ষমতায় না থাকলেও সে পৃষ্ঠপোষক মিডিয়াগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা চলছে। স্বৈরশাসকের পতনের এক বছর পরও এ মিডিয়াগুলো তাদের পুরোনো কৌশল থেকে সরে আসেনি। তারা আবারও জঙ্গিবাদের ধুয়ো তুলে দেশ ও বিদেশের সামনে বাংলাদেশের আলেমদেরকে টার্গেট করছে বলে অভিযোগ তাদের।
ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো অভিযোগ করে, এখন আবার সে পুরোনো বয়ানে দেশে ‘জঙ্গিবাদ’ খোঁজা হচ্ছে। যদিও অতীতের এ ‘জঙ্গি ইস্যু’ ছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক স্ক্রিপ্ট। তিনি দেশ ছাড়লেও সে স্ক্রিপ্ট বদলায়নি। জনমনে এ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে, এসব ঘটনা কি পরিকল্পিত কোনো নাটকের অংশ?
আরও পড়ুন>>>‘জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন ৫ আগস্ট বিকেলে’
পুলিশ প্রশাসন বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি নেই। দেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। সাবেক সরকারের সময় প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে ‘জঙ্গি’ তকমা জুড়ে দেয়া হতো। শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত মিডিয়াগুলো এ নাটক মঞ্চস্থ করত।
আবারও জঙ্গিবাদের নাটক শুরু হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রধান ইসলামি দলগুলো। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী অভিযোগ করে বলেন, অতীতে ‘জঙ্গিবাদের তকমা দিয়ে নাটক সাজানো হয়েছে’। গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করা অনেককে ‘জঙ্গি’ তকমা দেয়া হয়েছে। এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রাধান্য পেয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, অতীতে বিদেশিদের খুশি করার জন্য জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছিল। ইদানিংকালে এরকম একটা আভাস আমরা পাচ্ছি। কয়েকদিন আগে এরকম একটা জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছে। সেখানে কয়েকজনকে আসামিও করা হয়েছে। তার মধ্যে আমাদেরই সহযোগী সংগঠন, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ কালিমা পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল, তার নামটাও ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দেশে অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হবে। অনেক নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হবেন। প্রকৃত দোষী হলে তার বিচার করা হোক।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রকাশ্যে বলেছেন—দেশে কোনো জঙ্গি নেই। অথচ এর কিছুদিন পরই নতুন করে ‘জঙ্গি নাটক’ সাজানো হয়েছে। এ ধরনের সাংঘর্ষিক অবস্থান দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদের অভিযোগে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ ঘটনায় আমরা একটু সন্দেহ যে, এ ঘটনাটা সরকার কী উদ্দেশ্যে বা কোন প্রমাণ বা দলিলের ভিত্তিতে করলেন... এখানে সর্বজনস্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে এইটার সঙ্গে জড়িত করা হয়েছে। এটাকে আমরা কোনোভাবেই ভালো চোখে দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, জিহাদের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যেন কেউ সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে ইসলামি সংগঠনগুলো তৎপর। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান সরকারকে সতর্ক করে বলেন, জঙ্গি নাটকের যে কার্ড, এটা বিগত সরকারের একটা কার্ড ছিল। এর মাধ্যমে ইসলামি আন্দোলনকে, ইসলামি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা তারা অব্যাহতভাবে চালিয়েছে। সে ধরনের কোনো কিছু যদি বর্তমান সরকারও করে তাহলে এটা তাদের জন্য বুমেরাং হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, অতীতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদের নামে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যাতে করে ইসলাম, ইসলামি আদর্শ ও ইসলামি আন্দোলনকে বিতর্কিত করা যায়।
তিনি জামায়াতের অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর একজন আইনজীবী, একজন সাংবাদিকসহ ছয়জন লোক জীবন দিয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। সুতরাং জামায়াতের অবস্থান হলো জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে।
তিনি মনে করেন, এ জঙ্গিবাদের ইস্যু মূলত একটি বিশেষ দলের, যারা দীর্ঘ সাড়ে পনের বছর দেশ শাসন করেছে। তাদের সমর্থনকারী আরেকটি দেশের সম্মিলিত প্রয়াস। বর্তমানে একটা নরমাল পরিবেশ, ইতোমধ্যে কিন্তু কোনো জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেনি।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।