
সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর মিডফোর্ডে চাঁদা না দেয়ায় পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে মো. সোহাগ নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে। গত ৮ জুলাই সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুবদল নেতা মঈনসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
আরও পড়ুন>>>মিডফোর্ডে ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ
সোহাগকে যেভাবে খুন করা হয়েছে তা যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। টেনেহিঁচড়ে মাঝ রাস্তায় ফেলে বড় বড় পাথর দিয়ে আঘাত করে মৃত্য নিশ্চিত করা হয় সোহাগের।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যবসায়ীকে যখন নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছিল তখনও আশেপাশে অসংখ্য মানুষের আনাগোনা ছিল। তবে কেউই তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার সাহস দেখাননি। এ সময় তাদেরককে স্লোগানও দিতে দেখা যায়।
ঘটনার পরদিন সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা সবাই বিএনপির সহযোগী সংগঠনের সক্রিয় নেতাকর্মী।
আরও পড়ুন>>>খুলনায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে যুবদল নেতা নিহত
নিহত ব্যক্তির নাম মো. সোহাগ (৪৩)। তিনি কেরানীগঞ্জের পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় ভাঙারির ব্যবসায়ী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবদল নেতা মঈনসহ কয়েকজন যুবক তাকে রাস্তায় ফেলে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এক পর্যায়ে তার মাথা থেতলে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়ায় এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বলেন, মিডফোর্ডে চাঁদার জন্য ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে থেঁতলিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে যুবদল নেতাকর্মীরা। হত্যার পর তার লাশের ওপর বর্বর নৃত্য করেছে। বাংলাদেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ এ খুনিদের বিচার দাবি করছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ৪-৫ জন যুবক সড়কে পড়ে থাকা একজন ব্যক্তিকে বড় আকারের একটি পাথর দিয়ে ওপর থেকে আঘাত করা হচ্ছে। কেউ নিথর শরীরে আঘাত করছে আবার কেউ মাথায় সজোরে আঘাত করছে। এতে ওই লোকটির মাথা থেতলে যায় ও হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
পুলিশের সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সড়কটিতে অনেক লোক চলাচল করছিল। এরপরেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এতে সন্ত্রাসীরা সোহাগকে দীর্ঘ সময় ধরে পাথর দিয়ে থেতলে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে চকবাজার থানা যুবদল নেতা মহিন, সোহাগের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু সোহাগ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে রাজি হননি। এরপর প্রায় দুই মাস আগে মহিন বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়ে যায়। এরপর সেদিন সোহাগকে একা পেয়ে মহিনসহ ৪-৫ জন মিলে তাকে পাথর দিয়ে আঘাত করে ও উলঙ্গ করে নির্মমভাবে মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মামুন আরও বলেন, আমরা কেউ ভয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি। কারণ, মহিন চকবাজার থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিল। তার বিরুদ্ধে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফুটপাত ও কেমিকেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সুপারিশ করে চাকরি দেয়ার কথা অনেকেই জানে।
চকবাজার থানা যুবদল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহিন যুবদলের একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। দলের দুর্দিনে পাশে থাকলেও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় জড়ানোয় হতবাক হয়েছি আমরা। একইসঙ্গে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে লজ্জিতও। এ রকম হত্যাকাণ্ড যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সকলের এগিয়ে আসা উচিত বলে জানান নেতারা।
এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় নাম উল্লেখ করে ১৯ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।