ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিয়ে গুজব, গুঞ্জনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ শোরগোল চলছে। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে আদিয়ালা কারাগারের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে আফগানিস্তানের একটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশ পর এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে।
এমন পরিস্থিতিতে ইমরানের ছেলে কাসিম খান তার বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ চেয়েছেন এবং পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) এ শীর্ষ নেতাকে ছেড়ে দেয়ার দাবি তুলেছেন।
তবে পাকিস্তান সরকার বিষয়টিকে সরাসরি ‘গুজব’ বলছে। সরকার জানিয়েছে, আদিয়ালা কারাগারে থাকা ইমরান খান জীবিত এবং শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল।
তবে পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাদের কোনো সদস্যকে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে গুজব আরও ছড়িয়েছে। তাদের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগবঞ্চিত রেখে পরিস্থিতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বচ্ছ রাখা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানায়, ইমরান খানের ছেলে কাশিম খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে অভিযোগ করেন, তার বাবাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে সম্পূর্ণ একা রাখা হয়েছে এবং কোনো আত্মীয় বা আইনজীবীকে তার কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
কাশিম লিখেছেন, তার বাবা ৮৪৫ দিন ধরে আটক আছেন এবং গত ছয় সপ্তাহ ধরে তাকে একটি ‘ডেথ সেল’-এ একা রাখা হয়েছে। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বোনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। টানা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইমরান খানের শারীরিক অবস্থার কোনো তথ্য তারা পাননি বলেও পরিবার জানায়।
কাশিম আরও অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি গোপন করার জন্যই এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বিদেশি সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার বাবার জীবিত থাকার প্রমাণ, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সাক্ষাতের অনুমতি এবং ‘অমানবিক’ বিচ্ছিন্নতা বন্ধের দাবি জানান।
ইমরান খানের বোন আলিমা খানমও জানান, মাসের পর মাস ধরে পরিবারের সদস্যরা আদিয়ালা জেলের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করলেও বহুবার সাক্ষাতের অনুমতি পাননি। আরেক বোন নুরীন নিয়াজির অভিযোগ, চার সপ্তাহ ধরে তাদের কোনো সদস্যকেই দেখা করতে দেয়া হয়নি। এমনকি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পিটিআই নেতারাও সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ফেরত এসেছেন।
আরও পড়ুন<<>>তৃতীয় বিশ্ব থেকে অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করার ঘোষণা ট্রাম্পের
পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা জুলফি বুখারি জানান, দলটি ইমরান খানের মৃত্যুর গুজবকে বিশ্বাস করছে না। তবে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো সাক্ষাৎ না হওয়ায় অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। তার ভাষায়, ইমরান খানের সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয়া হলেই এসব জল্পনা থেমে যাবে।
বুখারি আরও অভিযোগ করেন, এমন এক সময়ে যখন সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সংশোধনী পার্লামেন্টে পাস হচ্ছে, তখন ইমরান খানকে কঠোর নজরদারিতে রেখে কথাবলার সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ৭৩ বছর বয়সী ইমরান খান কারাগারেই আছেন এবং সুস্থ আছেন। কারা প্রশাসনের বিবৃতিতে বলা হয়, পিটিআই নেতাদের তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। তাকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার দাবি সম্পূর্ণ অসত্য বলে উল্লেখ করেছে কারাগার।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ খানও গুজব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা ভালো এবং চিকিৎসকরা নিয়মিত তার পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছেন। খাবার, ওষুধ, ব্যায়ামসহ সব ক্ষেত্রেই তার যত্ন নেয়া হচ্ছে।
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়া ইমরান খান ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে তিনি কারাবন্দি। পিটিআই বলছে, এসব মামলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
তাকে ঘিরে বর্তমানে যে গুজব ছড়িয়েছে, তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়েছে। পরিবার সাক্ষাতের অনুমতি না পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে; আর সরকার দাবি করছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।
এ দুই বিপরীত অবস্থানের কারণে অনলাইনে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, যা থামাতে সরকার ও জেল প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবারেরও স্বচ্ছ তথ্যপ্রাপ্তি জরুরি হয়ে উঠেছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।
