
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গাজার উল্লেখযোগ্য অংশ থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যেতে শুরু করেছে। সরায়েলি সেনাবাহিনীর কিছু ব্রিগেড ও ডিভিশনকে গাজার কেন্দ্রীয় অংশ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার বাস্তুহারা পরিবারগুলোও পশ্চিমের আবাসিক এলাকা থেকে গাজার মূল অংশে ফিরতে শুরু করেছেন, যেখান থেকে তাদের জোর করে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নুসেইরাত আশ্রয় শিবির থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো উত্তর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। তবে তারা এখনও নেতজারিম করিডোরে প্রবেশ করতে পারেনি, যেখানে আগে ইসরায়েলি সেনারা অবরোধ করে রেখছিল।
পরিবারগুলো অপেক্ষায় আছে, ওই অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের শেষ ট্যাংকটি চলে যাওয়ার পর তারা সেখানে প্রবেশ করতে চায়।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, শনিবার (১১ অক্টোবর) পর্যন্ত গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির শেজাইয়া, আল তুফাহ এবং জেইতুন এলাকা, এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের পূর্বাংশ ও দক্ষিণাংশ থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার শুরু করার পরপরই গাজার ফিলিস্তিনিরা নিজ বাসভূমিতে ফিরতে শুরু করেছেন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজেদের এলাকায় ফিরে এসেছেন। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিন দক্ষিণ গাজার অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে উত্তর গাজায় ফিরে গেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
যানবাহনের পরিমাণ কম এবং তেলের সংকট থাকায় অধিকাংশ ফিলিস্তিনি পায়ে হেঁটে যাত্রা করেছেন। একইভাবে, দক্ষিণ গাজার যেসব বাসিন্দা গাজার মধ্যঞ্চলীয় শহর গাজা সিটি এবং পূর্ব গাজায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারাও নিজ নিজ এলাকায় ফেরা শুরু করেছেন। বাড়ি ফেরার জন্য তারা সমুদ্রের তীরবর্তী আল রশিদ স্ট্রিট এবং সালাহ আল দীন রোড— এ দু’টি সড়ক ব্যবহার করছেন।
আরও পড়ুন<<>>ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে না
ইসরায়েলি বাহিনীর গত ২ বছরের অভিযানে গাজার ৯০ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বাকি ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর একটি বড় অংশই ঘরবাড়ি। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান থেকে জীবন বাঁচাতে যারা নিজেদের এলাকা ও বাড়িঘর ছেড়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশের বাড়িঘর এখন ধ্বংসস্তূপ। যেসব ফিলিস্তিনি ইতোমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন, তারা তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছেন।
গাজার সরকারি তথ্য দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা এবং ধ্বংস্তূপের তলায় আটকে থাকা মৃতদের দেহাবশেষ উদ্ধার করতে ইতোমধ্যে উপত্যকাজুড়ে ৫ হাজার মিশন শুরু হয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দফতর হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ইসরায়েল এবং গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস সম্মতি জানানোর পর ১০ অক্টোবর শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ইসরায়েলের গত ৭৭ বছরের ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে বড় ও প্রাণঘাতী হামলা।
হামাসের এ হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করতে পরের দিন ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সে অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।