
ছবি: আপন দেশ
ভিন্ন কিছু করার তীব্র বাসনা, মনের মধ্যে বুনতে থাকা স্বপ্ন এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে অনিশ্চয়তার সাগরে ঝাপ। অতঃপর দূর্গম দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সফল উদ্যোক্তার তকমা ছিনিয়ে নেয়া। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সফল উদ্যোক্তা দম্পতি এস এম রিজন ও রিসা আফরিনের কথা।
এ দম্পতি বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেন সিল (দাফতরিক কাজের জন্য ব্যবহৃত মোহর) বানানোর কাজ। ব্যর্থতার বেড়াজাল ও নানা সীমাবদ্ধ পেরিয়েছে আজ তারা 'বেঙ্গল'স সিগনেচার' নামে একটি সিল তৈরি ও প্রদর্শনী শো-রুম স্থাপন করেছেন। যা ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে দেশে-বিদেশে। মানসম্মত এবং চমৎকার ডিজাইন হওয়ায় অফলাইন-অনলাইনে দেশ-বিদেশের যেকোনো প্রান্তে পৌছে দেয়ায় পাচ্ছেন বাড়তি সাড়া।
রিজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এবং রিসা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মাত্র ৩৬০ টাকা দিয়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের যাত্রার শুরুটা হয়। ঢাকা থেকে একটি বানিয়ে এনে অর্ডার নিতে শুরু করেন তারা। বিভিন্ন ফেসবুক, ম্যাজেঞ্জার গ্রুপ এবং অফলাইনে পরিচিত জনদের কাছে চান অর্ডার। অল্প সময়ে পান কাঙ্খিত সাড়া। কিন্তু তখন তাদের বিনিয়োগের জন্য ছিল না কোনো অর্থ, অপরদিকে জানতেন না কিভাবে সিল তৈরি করতে হয় কিংবা কাঁচামাল পাওয়া যায় কোথায়।
আরওপড়ুন<<>>রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মোর্শেদ
এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে আরেকটি বড় বাঁধা ছিল পরিবার। রিজনের বাবা ছিলেন এমন ব্যবসার ঘোর বিরোধী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে সিল বানাবেন, বিষয়টি ছিল তার কাছে চরম দৃষ্টিকটূ। তবে মায়ের মানসিক সাপোর্ট এবং বড় ভাইয়ের থেকে পাওয়া কিছু অর্থে এগিয়ে যেতে সাহস জোগায় তাকে। অবশেষে অনেক গবেষণার পর চীন থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে কাজ শিখতে মনোযোগী হন তারা। প্রথমদিকে লস ও অনেক সামগ্রী নষ্ট হলেও ধীরে ধীরে কাজ শিখে আঁধাপাকা টিনের দোকান নিয়ে সেখানেই বসতেন তারা। তবে এখন সুসজ্জিত শো-রুমে বসছেন রাজশাহী মহানগরীর বিনোদপুর বাজারে। মাসে প্রায় ৪০০-৫০০ সিল তৈরি ও সরবরাহ করছে এ দম্পতির গড়া প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন ৮-১০ শিক্ষার্থীর। রাজশাহীতে তেমন কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় পার্টটাইম জব পেয়ে খুশি বেঙ্গল’স সিগনেচার’র জব হোল্ডাররা। প্রতি মাসে কর্মীদের প্রায় ৭০ হাজার টাকা বেতন দেয়াসহ যাবতীয় খরচ শেষে মাসে লাভ করছেন লক্ষাধিক টাকা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয় রিজন-রিসা দম্পতির সঙ্গে। তারা বলেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কিছু করার ইচ্ছে থেকেই ভিন্ন কিছু নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা মাথায় আসে। ঘাটাঘাটি করতে করতে খেয়াল করলাম অনলাইনে সিল সরবরাহ করে এমন কোনো ভালো প্লাটফর্ম নেই। সেখান থেকে লক্ষ্য স্থির করে কাজ শুরু করা। যখন কাজ শুরু করি, তখন কোনো ধারণা ছিল না কিভাবে কি করতে হবে। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে শিখেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা বর্তমানে একটা অবস্থানে আসতে পেরেছি।
বর্তমানে বেঙ্গল'স সিগনেচার'র মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ফ্ল্যাশ সিল পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। সিল দিয়ে একটা সৌখিন প্রোডাক্ট, কাস্টমারের সর্বোচ্চ চাহিদা অনুযায়ী আমরা বানানোর চেষ্টা করি। যেন একটা সিল দেখে বোঝা যায়, নিশ্চয়ই এটা কোন সৌখিন একজন মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং মনন থেকে তৈরি। এছাড়াও আমাদের অফিসে বর্তমানে ৮ থেকে ১০ জনের কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ তৈরি করেছি আমরা। এ ছোট্ট সুযোগ তৈরি করাটাই আমাদের কাছে অনেক বড় একটা পাওয়া।
আপন দেশ/এমএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।