
ছবি : আপন দেশ
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানের নিয়োগে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের তদন্তে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্টের রুল ও দুদকের চিঠির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩তম সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম শাহিদুল ইসলামকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের (অব) শামসুল আলম সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ।
জানা যায়, নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্র ‘জালিয়াতি’ করে ২০১২ সালে প্রভাষক পদে নিয়োগ নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ১৩ বছর ধরে চাকরি করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগের শিক্ষক ফোরাম হলুদ দলের দাপট দেখিয়ে ‘অবৈধভাবে’ চাকরি করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভায় শিক্ষকরা হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবি করলে এ শিক্ষক তার তীব্র বিরোধীতা করেন।
সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে বেশ কয়েকবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তাবিউর রহমান। লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) ও লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ ও মোতাহার হোসেনের পক্ষে নৌকা মার্কার নির্বাচনী প্রচারণার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এ শিক্ষকের। আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে তাবিউর একাধিকবার শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি টিকিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে শিক্ষক তবিউর রহমানের বিরুদ্ধে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃতভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মো. মাহামুদুল হককে বঞ্চিত করে তাবিউরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে কাটাছেঁড়া করে ‘যে কাউকে’ বলে তাবিউরের নাম কলম দিয়ে বসানো হয়।
নিয়োগবঞ্চিত হওয়া শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় তাবিউর রহমানকে জালিয়াতি করে চাকরি দিয়েছে এবং আবার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট বলছে তার চাকরি অবৈধ। তাহলে তাকে সাসপেন্ড করে না কেন? তিনি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অতি প্রয়োজনীয় নাকি তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভয় পায়— কোনটি? তার একদিনও চাকরি করার অধিকার নাই।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি অবৈধ প্রক্রিয়ায় কীভাবে ১৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন সেটাই বড় প্রশ্ন। এর দায় বিগত সকল ভিসিকে নিতে হবে। যেহেতু জ্যেষ্ঠ্যতা সম্পর্কিত মামলা, সেহেতু তাকে বিভাগীয় প্রধান থেকে সরাতে হবে। একদিনের জন্যও তার চাকরি করার অধিকার নাই।
১৩ বছর ধরে অবৈধভাবে চাকরি করে যাওয়া তাবিউরকে কেন এখনো বরখাস্ত করা হয়নি এমন প্রশ্ন তুললে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, এ বিষয়ে আগে থেকেই তদন্ত কমিটি ছিল। তবে কিছু সিন্ডিকেট সদস্য পরিবর্তন হওয়ার কারণে কমিটি পুনরায় গঠন করা হয়েছে। শিক্ষক তাবিউর রহমানের নিয়োগ জালিয়াতের বিষয়ে ইউজিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবগত করার প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুতই এ ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
এর আগে গত বছরের জুন মাসে কমিটির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টের পর সিন্ডিকেট সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু জুলাই বিপ্লব এবং সরকার পতনের পর তা আর আলোর মুখ দেখি।
এ ব্যাপারে তৎকালীন সিন্ডিকেট সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, কমিটি গঠনের পর আমরা আর আগাতে পারিনি। আমি থাকি চট্টগ্রাম। সেখান থেকে এসে রংপুরে সাক্ষাৎকার ও তথ্য যাচাই-বাছাই করা একটু কঠিন। তাই আমি ভিসি স্যারকে বলেছিলাম কমিটিটা ইন্টার্নাল কাউকে দিয়ে করানোর জন্য। কমিটি তখন পুর্নগঠন করার কথা থাকলেও আর করতে পারেনি। পরে ভিসি স্যার পরিবর্তন হয়ে গেলো।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।