Apan Desh | আপন দেশ

পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই দিলেন ডাক্তার, মৃত্যুশয্যায় রোগী

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ৯ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৭:০১, ৯ জুলাই ২০২৫

পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই দিলেন ডাক্তার, মৃত্যুশয্যায় রোগী

ছবি: আপন দেশ

অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর পেটে ফরসেপ (কাঁচি জাতীয় যন্ত্র) রেখেই সেলাই দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জনের বিরুদ্ধে। আর ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। 

এদিকে, অস্ত্রোপচারের সাত মাস পর গত ১৮ জুন বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফের অস্ত্রোপচারে কাঁচিটি বের করা হয়। এ ঘটনায় মৃত্যুশয্যায় ভুক্তভোগী কহিনুর বেগম (৭০)।

ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাত মাস আগে পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে বরগুনার পৌর শহরে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন কহিনুর বেগম। হঠাৎ পেটব্যথা শুরু হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বরগুনার কুয়েত প্রবাসী হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। পরীক্ষা করার পর তার জরায়ুর সমস্যা ধরা পড়ে। পরে ওই হাসপাতালেই কহিনুর বেগমের জরায়ুর অস্ত্রোপচার করেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজ ও কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসক ডা. সাফিয়া পারভীন।

অস্ত্রোপচারের পর থেকেই ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নিয়ে গেলে সেখানে এক্স-রে রিপোর্টে ওই নারীর তলপেট কাঁচিসদৃশ একটি বস্তু ধরা পড়ে। এরপর গত ১৮ জুন বরিশালের শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে অস্ত্রোপচার করে কহিনুর বেগমের পেট থেকে কাঁচিটি অপসারণ করা হয়। প্রাথমিক অস্ত্রোপচারে তার মলদ্বার বাদ দিয়ে আলাদা রাস্তা করা হলেও সেখানে ইনফেকশন হয়েছে। এখন মৃত্যুশয্যায় ওই নারী।

কহিনুর বেগমের মেয়েজামাই হুমায়ুন বলেন, ‌আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসার পরে আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তারের পরামর্শে ওই হাসপাতালে তার অপারেশন করানো হয়। চারদিন হাসপাতালে থেকে বাড়ি নিয়ে আসার একদিন পরেই তিনি আবার অসুস্থ হলে তাকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপরে সেখানে আরও ১১ দিন ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। এতেও তিনি সুস্থ না হওয়ায় বরিশালে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর পর রোগীর পেটের মধ্যে কেঁচি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে কহিনুর বেগমের মেয়ে ফাহিমা বেগম বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মা এখন মৃত্যুশয্যায়। আমার মায়ের খাদ্যনালী কেটে ফেলতে হয়েছে। আমরা মামলা করবো। আমি ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিচার চাই।

ভুল চিকিৎসার বিষয়ে কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক গাজী (মন্টু) বলেন, শুনেছি ওনার পেটে কাঁচি পাওয়া যায়। ঘটনা শুনে আমি ওই পরিবারের খোঁজ নিতে বরিশালেও গিয়েছি। এ ঘটনার পরে আমার হাসপাতালের যন্ত্রপাতি চেক করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কিছু হারানো যায়নি। যেহেতু আপারেশনটি ডাক্তার করেছেন, তাই এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, বরগুনাতে মানহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। বিষয়টি শুনেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/এমএইচ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়