Apan Desh | আপন দেশ

দুদক কর্মকর্তার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিষ্ফল লকার অভিযান, নেপথ্যে ভয়ঙ্কর কাণ্ড! 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৩:৫৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দুদক কর্মকর্তার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিষ্ফল লকার অভিযান, নেপথ্যে ভয়ঙ্কর কাণ্ড! 

কাজী মো: সায়েমুজ্জামান

সবার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বাংকের দিকে। দৃষ্টি আকর্ষণকারী অপর সংস্থার নাম দুর্নীতি দমন কমিশন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় শীর্ষ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে বিলিয়ন ডলার লোপাট ও পাচার করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা। যদিও এ সংস্থার অধিকাংশ কর্মকর্তার সততা নিয়ে প্রশ্ন নেই।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। পালিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্র শেখ হাসিনা। দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের আমলনামা খুঁজে পেয়েছে। বাকিদের সম্পদের খোঁজে দুদক। কিন্তু দুর্নীতিবাজ তালাশ করতে গিয়ে পুরো সংস্থাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে দুদকেরই কর্মকর্তা। এ নিয়ে নানা ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে আসছে। 

রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক নিষ্ফল অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থার ৮ সদস্যের একটি টিম আদালতের অনুমতি নিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় সুরক্ষিত লকার বা সেফ ডিপোজিটর খুলতে পরিচালনা করা হয় অভিযান। সঙ্গে ছিলেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

আদালতের আদেশ দেখিয়ে সুরক্ষিত লকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান তিনশ’ পদস্থ কর্মকর্তার অর্থসম্পদ ও মূল্যবান নথিপত্র রয়েছে-এ দাবি দুদক টিমের। কিন্তু নথিপত্র ঘেটে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট তালিকায় নাম থাকা অন্তত: ২৫ কর্মকর্তার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোনো লকারই নেই! 

এর আগে দুদক মহাপরিচালক মো: আক্তার হোসেন জানান, ৩শ’ কর্মকর্তার লকারে রক্ষিত অর্থসম্পদ বা নথিপত্রের একটি তালিকা করা হবে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বা আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ  কোনো সম্পদ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে পরবর্তীতে তদন্ত করা হবে। 

গত ২৬ জানুয়ারি দুদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের লকারে তল্লাশি করে প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পায়। 

তল্লাশিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরও কয়েক শ’ লকার দেখতে পায় দুদক টিম। এসব লকারের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৫ কর্মকর্তার নামেও অনুরূপ লকার রয়েছে এবং এসব লকারে এস.কে. সুরের মতোই কোটি কোটি টাকা, মূল্যবান ধাতব, বিদেশী মুদ্রা ও মূল্যবান সম্পদের নথিপত্র থাকতে পারে-এমন ধারণা করে টিমটি। লকারগুলো খুলতে আদালতের দ্বারস্থ হয় দুদক।

সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো: নাজমুল হুসাইন গত ০৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো: জাকির হোসেনের আদালতে আবেদন দেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ রয়েছে? তাদের বিরুদ্ধে কি অনুসন্ধান-তদন্ত চলমান। এসব জানতে চান আদালত।

দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ওইদিন পর্যন্ত দুদকের হাতে ৩শ’ কর্মকর্তার বিষয়ে কোনো তথ্যই ছিলো না। এস.কে. সুরের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ আবিষ্কার করে দুদক পরিচালক কাজী মো: সায়েমুজ্জামান নিজেই তড়িঘরি করে একটি ‘অভিযোগ’ (স্মারক নং-দুর্নীতি দমন কমিশন,প্রধান কার্যালয়,ঢাকার নথি নং-০০/০১.০০০.৪১১.০১.০০৩.২০২২-৭৪৮২, তারিখ-০২/০২/২০২৫) তৈরী করেন। তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ বর্তমান ও সাবেক ৩শ’ কর্মকর্তার তালিকা দেয়।

ওই তালিকা দাখিল করে আদালতে দুদক জানায়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত ওইসব লকার খোলার অনুমতি পায়। এর ভিত্তিতে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়ে লকারগুলো খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

আরও পড়ুন<<>> বিএফআইইউ ফের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় এস আলম চক্র

সে অনুযায়ী রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) লকারগুলো খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করে দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের দুদক টিম। কিন্তু অভিযানে দেখা যায় ওই ২৫ কর্মকর্তার নামে কোনো লকারই বাংলাদেশ ব্যাংকে নেই। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থার মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন আপন দেশ’কে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

এর আগে টিমের প্রধান কাজী সায়েমুজ্জামান অভিযানে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরবর্তী অভিযানে আসবে দুদক। এ অভিযোগ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাই। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে বহাল এবং অনেকেই সাবেক কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুলনা, বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক কার‌্যালয়ে কর্মরত। 

তিনি বলেন, যে ২৫ জনের অভিযোগের ভিত্তিতে এসেছিলাম, তাদের নামে কোনো লকার নেই। আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরবর্তী অভিযানে আসবে দুদক। ২৭২ টি  সেফ ডিপোজিট লকারের সন্ধান পাওয়া যায়।

২৫ কর্মকর্তার তালিকা:

সাবেক ডেপুটি গভর্নর খুরশিদ আলম, সাবেক নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো: নাসের, বিএফআইইউ’র সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, পরিচালক মো: সারোয়ার হোসেন, যুগ্ম পরিচালক (চট্টগ্রাম) সুনির্বাণ বড়ুয়া, যুগ্ম পরিচালক (চট্টগ্রাম) জোবাইর হোসেন, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের অনিক তালুকদার, রুবেল চৌধুরী, লেলিন আজাদ পলাশ, অতিরিক্ত পরিচালক মো: আবদুর রউফ, অতিরিক্তি পরিচালক মো: মঞ্জুর হোসেন খান,  জেনারেল ম্যানেজার জাকির  হোসেন,  ডেপুটি  জেনারেল ম্যানেজার ইমাম সাঈদ, সাবেক নির্বাহী পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান; যুগ্ম পরিচালক মো: ওয়াদুদ, সাবেক উপ-পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন, সাবেক সহকারী পরিচালক (ক্যাশ) আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেইনিং অ্যাকাডেমির সহকারী পরিচালক আমিরুজ্জামান মিয়া, সাবেক ডিজিএম তরুণ কান্তি ঘোষ, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বিএফআইইউ’র একজন অতিরিক্ত পরিচালক। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়