ছবি: আপন দেশ
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন আর জোটের নয়, বরং স্পষ্ট প্রতিযোগিতার। বাস্তবতা হলো- এ জোট অনেক আগেই ভেঙে গেছে, যদিও তার রাজনৈতিক অভিঘাত এখন সামনে আসছে নতুন রূপে। বর্তমান রাজনীতিতে প্রশ্ন আর কে কার মিত্র- তা নয়; প্রশ্ন হলো, কে কোন ইতিহাস ধারণ করছে এবং কোন ভোটারকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর বার্তাটি আরও স্পষ্ট হবে।
জামায়াতে ইসলামী আজও ১৯৭১-এর প্রশ্নে রাজনৈতিকভাবে বোঝা বহন করছে। স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের দায় দলটির ঘাড় থেকে নামেনি। বিপরীতে বিএনপি গত কয়েক বছরে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান নতুনভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। দলটির বক্তব্যে এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের মালিকানার বার্তা স্পষ্ট। এ জায়গাটিই বিএনপি ও জামায়াতের পার্থক্যকে চূড়ান্তভাবে দৃশ্যমান করে তুলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ পার্থক্য শুধু আদর্শিক নয়, এটি সরাসরি ভোটের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১-এর স্মৃতি এখনো প্রবীণ ভোটারদের রাজনৈতিক চেতনার কেন্দ্রবিন্দু। অন্যদিকে ২০২৪ সাল নতুন ভোটারদের কাছে প্রতীক হয়ে উঠেছে বর্তমান বাস্তবতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রশ্নে। এ দুই প্রজন্মের রাজনৈতিক চাহিদা এক নয়, ভাষাও এক নয়।
তারেক রহমান এ বাস্তবতা গভীরভাবে অনুধাবন করছেন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তার রাজনৈতিক কৌশল এখন দ্বিমুখী- একদিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে প্রবীণ ভোটারদের আশ্বস্ত করা, অন্যদিকে তরুণ ও নতুন ভোটারদের কাছে ২০২৪ সালের গণঅভূত্থানের বাস্তবতা, কর্মসংস্থান, অধিকার ও ভবিষ্যতের বয়ান তুলে ধরা। এ দ্বৈত কৌশল বিএনপিকে একটি বিস্তৃত ভোটব্যাংকের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
এ জায়গাটিতেই জামায়াতের রাজনৈতিক সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। দলটি ১৯৭১-এর দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেনি, আবার ২০২৪-এর নতুন ভোটারদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে বিএনপির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জামায়াত ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। এটি কোনো তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়; বরং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবস্থানের স্বাভাবিক পরিণতি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নেতৃত্বের প্রশ্ন। তারেক রহমান বিএনপির রাজনীতিকে কেন্দ্রীয়, নিয়ন্ত্রিত এবং কৌশলগত কাঠামোয় নিয়ে আসছেন। এতে জোট রাজনীতির পুরোনো নির্ভরতা ভেঙে গিয়ে একক নেতৃত্বের রাজনীতি সামনে আসছে। জামায়াতের জন্য এটি একটি স্পষ্ট বার্তা- বিএনপির রাজনীতিতে তারা আর নির্ধারক শক্তি নয়।
সব মিলিয়ে, বর্তমান রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক আর ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আটকে নেই। এটি এখন ভোটার, ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের লড়াই। ১৯৭১ ও ২০২৪-এ দুই সময়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তারেক রহমান চেষ্টা করছেন দুই প্রজন্মের ভোটারকেই টানতে। আর সেই চেষ্টাই বিএনপি–জামায়াত প্রতিযোগিতার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































