Apan Desh | আপন দেশ

না’গঞ্জে বিতর্কিত সাখাওয়াতে ডুবছে বিএনপি

বিশেষ প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ২২:৫১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

না’গঞ্জে বিতর্কিত সাখাওয়াতে ডুবছে বিএনপি

সাখাওয়াত হোসেন খান।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহরের রাজনীতিতে দাপট বেড়েছে মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে তার একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে।

আদালতপাড়ায় ভাঙচুর, আসামি মারধর ও ঐতিহ্যবাহী ‘বায়তুল আমান’ ভবন গুঁড়িয়ে দেয়ার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ ও রশিদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের পক্ষে মামলা লড়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সে সাখাওয়াত আবার আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করেছেন। নিজেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দাবি করে তৃণমূলে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ পাঁচ আসনে এরমধ্যে মাসুদুজ্জামান মাসুদকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে মাসুদ নারায়ণগঞ্জ পাঁচ আসনের প্রতিটি ভোটারে কাছে ছুটে যাচ্ছেন।  

সাখাওয়াত হোসেন খান প্রথম আলোচনায় আসেন সাত খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে। ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগের আইভীর কাছে পরাজিত হন। সে নির্বাচনে শামীম ওসমানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নেয়ার অভিযোগ করেন বর্তমান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এছাড়া বিএনপির দেয়া নির্বাচনি তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল কায়সার আশা। সম্প্রতি আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ গালিবও ২ কোটি টাকা নেয়ার বিষয়টি সামনে আনেন। এমনকি সাখাওয়াতের স্ত্রী অ্যাডভোকেট শামীমা সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের পিএস ছিলেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

আরও পড়ুন>>>দরিদ্র মজিবুর এখন হাজার কোটির টাকার মহারাজা

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেয়া ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। মহানগর বিএনপির সূত্রমতে, মামলা থেকে রেহাই দেয়ার কথা বলে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে ‘মব কালচার’ ও ভাঙচুরের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও ওই দিনই সাখাওয়াতের নেতৃত্বে আদালতপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাখাওয়াত নিজে শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে ম্যুরাল ভাঙায় অংশ নেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই ফ্রন্টলাইনে চলে আসা বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে আশ্রয় দেয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার আসামিদের জামিনে সহযোগিতা, মামলা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ আছে। 

মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সাখাওয়াত ৫ আগস্টের পর মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সর্বশেষ আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন শামীম ওসমানের বাড়ি ভাঙ্গায় নেতৃত্ব দিয়ে। রাজধানীতে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার পর বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে ‘মব কালচারের’ বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তারা সারাদেশের ভাঙচুরের ঘটনাগুলোর কথা উল্লেখ করে এতে উদ্বেগও প্রকাশ করেন ও সকলকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। 

যেদিন বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে এ বিবৃতি দেন ওইদিনই নারায়ণগঞ্জে আদালতপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকটি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় থাকা বঙ্গবন্ধু কর্নারেও ভাঙচুর করা হয়। এ পুরো কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। 

আরও পড়ুন>>>নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে এহসানুল হুদা

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, ওইদিন বেলা সাড়ে এগারোটর দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে তারা নির্মাণ শ্রমিকদের খবর দেন। বেলা বারোটার দিকে বড় আকারের হাতুড়ি, শাবল নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকরা পৌঁছালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবরের ম্যুরালটি ভাঙা শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হেসেন খান ও আবু আল ইউসুফ টিপু নিজেও শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে ম্যুরাল ভাঙা কার্যক্রমে অংশ নেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আবক্ষ ভাস্কর্যটিও ভাঙা হয়। পরে পাশে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের দু’টি ম্যুরালও একইভাবে ভাঙা হয়। যদিও এ ম্যুরালগুলো গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। এক দফায় ভাঙচুরও চলে তখন। আদালতপাড়ায় ভাঙচুরের সময় শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদাবাড়ি বায়তুল আমান ভাঙার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির এ নেতা। পরে সন্ধ্যায় বায়তুল আমান এক্সাভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় মাগরিবের আযানের কিছুক্ষণ পর শহরের মিশনপাড়া এলাকা থেকে সাখাওয়াত ও টিপুর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বায়তুল আমানের সামনে গিয়ে থামে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদের হাতে থাকা বড় আকারের হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পরই একটি এক্সাভেটর আনা হয় ও ভবনটি পরে গুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতাকে উল্লাস করতে দেখা যায়। সে সাখাওয়াত বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দাবি করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে সভা সমাবেশ করছেন। রোববার রাতে তাকে দেখা গেছে বিতর্কিত বিএনপি নেতা জাকির খানের বাসভবনে। এনিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে চারোদিকে। শামীম ওসমানের ক্যাডারদেরও তার আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে। এমবস্থায় সাখাওয়াত নিজেকে বিএনপির প্রার্থী দাবি করে চারোদিকে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন। বিএনপি যদি তাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী করে তাহলে ভরাডুবি নিশ্চিতই বলা যায়।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়