
সংগৃহীত ছবি
মাদারীপুরে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় গিয়ে কর্মকর্তাদের টেনেহিঁচড়ে বের করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার বিরুদ্ধে। জামায়াতের ওই নেতার নাম আবদুর রহিম। তিনি দলটির মাদারীপুর পৌর শাখার নায়েবে আমির। মাদারীপুর পুরান বাজার কাজীর মোড়ের ডি এম টেইলার্সের মালিক তিনি।
সম্প্রতি এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আবদুর রহিম তার অনুসারীদের নিয়ে মাদারীপুর শহরের পুরান বাজার ইসলামী ব্যাংকের শাখায় প্রবেশ করেন। পরে তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের কক্ষে প্রবেশ করেন। ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বক্তব্য দেন। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, কাল থেকে যেন তারা (এস আলমের সময়কালে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা) ব্যাংকে না আসে। এস আলমের কোনো লোক এ ব্যাংকে থাকতে পারবে না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে তাদের আর যেন এ ব্যাংকে আমরা আর দেখতে না পাই।
আরও পড়ুন>>>বিষাক্ত মদপানে মৃতের সংখ্যা রেড়ে ৬
ভিডিওর আরেকটি অংশে আবদুর রহিমকে বলতে শোনা যায়, এখানে চাকরি করতে পারবে না, পারবে না, পারবে না। আজকে আপনাদের ম্যানেজারসহ বলে গেলাম, আগামী দিন আমরা আবার আসব। পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়ে যায়। আমরা টেনেহিঁচড়ে ব্যাংক থেকে বের করে দেব, ইনশাল্লাহ! আগামীকাল কোনো প্রক্রিয়ায় যেন অবৈধ লোক এ ব্যাংকে প্রবেশ করতে না পারে। যদি সঠিক পন্থায় নিয়োগ হয়, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাদের জবাব দিতে হবে। না হলে তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দিতে হবে। আমরা ঘোষণা দিয়ে গেলাম। আগামীকাল আবার খোঁজখবর নেব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুর রহিম বলেন, দলীয়ভাবে আমাদের ওই ব্যাংকে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা ছিল না। আমরা বৃহস্পতিবার ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেছি। পরে ব্যাংকের ম্যানেজার আমাদের ডাকলে তার কক্ষে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, এস আলমের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা যেন এ ব্যাংকে না থাকতে পারে। এটাই আমরা বলেছি। কোনো হুমকি-ধমকি দেইনি। বাকি কথা ব্যাংকের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করুন, তিনি উত্তর দেবেন।
ইসলামী ব্যাংক মাদারীপুর পুরান বাজার শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল গাফ্ফার মিয়া বলেন, সারাদেশেই ইসলামী ব্যাংক থেকে ছয় হাজার ৫০০ জন ছাঁটাই হয়েছে। আমাদের ব্রাঞ্চ থেকে ১৬ জন বাদ পড়েছে। যারা ছাঁটাই হয়েছে, তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছে। তার প্রতিবাদে আবার গ্রাহকেরা মানববন্ধন করেছে। ওই দিন আবদুর রহিম একজন গ্রাহক হিসেবে মানববন্ধনে অংশ নেন। পরে ব্যাংকে আসেন। তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, একজন গ্রাহক হিসেবেই বলেছেন। বর্তমানে যারা ব্যাংকে কর্মকর্তা আছেন, তাদের উদ্দেশ করে তিনি কিছু বলেন নাই।
তবে ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ ব্রাঞ্চ থেকে ১৬ জন ছাঁটাই হয়েছে। হুমকির পর থেকে একজন ব্যাংকে আসছেন না। যাদের বাদ দেয়া হয়েছে, তারা সবাই অনিয়মের মাধ্যমে আসেননি। যোগ্যতা দিয়ে নিয়োগ পাওয়া কেউ কেউ বাদ পড়েছেন।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি এনায়েত হোসেন বলেন, আবদুর রহিম ইসলামী ব্যাংকে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন, এমন কথা শুনিনি বা জানি না। ব্যাংকের ম্যানেজার তাকে ডাকছিল বলে শুনেছি।
তিনি বলেন, ফেইসবুকে আমরা তার বক্তব্য শুনেছি। এটি নিয়ে আমরা আলাপ করে বিষয়টি দেখব।
জামায়াতে ইসলামী নেতা আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকে প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ কর্মী আগের সরকারের সময়ে এস আলম গ্রুপের মনোনীত ব্যক্তিদের অনিয়ম করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানের ইসলামী ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়ম করেছে যে, তারা আগের কর্তৃপক্ষের অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া কর্মকর্তাদের নতুন করে পরীক্ষা গ্রহণ করে চূড়ান্তভাবে আবারও নিয়োগ প্রদান করবে। কিন্তু ওই সকল কর্মকর্তারা তা মানতে চায়নি। তবে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া মাদারীপুর পৌর নায়েবে আমিরের ওই হুমকির বক্তব্য আমাদের দলীয় কোনো বিষয় নয়। ওই বক্তব্য তার ব্যক্তিগত।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।