
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশ কি আদৌ নির্বাচনের পথে হাঁটছে, নাকি আরও একবার গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক কিছুর পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে দেশকে?
এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। আর সে উত্তরের অনেকটাই নির্ভর করছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রাতের ভাষণের উপর। তার আগে রাজনীতির অঙ্গনে যা ঘটছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে— সব কিছু অতটা সরল নয়।
কক্সবাজারের ইনানীতে সদ্য আলোড়ন ফেলে দিয়েছে একটি ‘গোপন বৈঠক’। হোটেল রয়্যাল টিউলিপ (সী পার্ল রিসোর্ট)–এ অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতারা— হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী, তাসনিম জারা।
তাদের সঙ্গেই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বর্তমানে অ্যাকসিলারেট এনার্জি নামক একটি বেসরকারি জ্বালানি প্রতিষ্ঠানের দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি পিটার হাস।
এ বৈঠক কি নিছক ‘ভ্রমণ’?
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম এ বৈঠকের কথা সামনে আনেন প্রবাসী সাংবাদিক নাজমুস সাকিব। তার দাবি, কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছেও এনসিপির এ সফর গোপন রাখা হয়। পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহার উদ্দিনের স্ত্রী আফরোজা হেলেনের ফোনে কক্সবাজার স্পেশাল ব্রাঞ্চ প্রটোকল নিশ্চিত করে।
একই দাবি করেন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক জাজিজুল হক জিয়ন। তার ভাষ্য, ‘এরা যে কেবল ঘুরতে আসেনি, তা পরিষ্কার— কারণ সব সময় প্রটোকল নিয়ে চলা এনসিপির নেতারা এবার গোপনে এসেছেন, গোপনে বৈঠক করেছেন। উদ্দেশ্য কী? ড. ইউনূসকে নির্বাচন নিয়ে ঘোষণায় প্রভাবিত করার জন্য পিটার হাসের সহায়তা চাওয়া?’
আরও পড়ুন<<>> ৭১ স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ,২৪ ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ: তারেক রহমান
এনসিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ এসব অভিযোগকে ‘অপপ্রচার’ বলে দাবি করে বলেন, ‘তারা পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছেন, কোনো বৈঠক হয়নি’। তবে টেলিভিশন ও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুপুরে পিটার হাসের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠকে মিলিত হন এনসিপি নেতারা। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
পিটার হাস: ‘অতিথি’ না ‘এজেন্ট’?
এক বছর আগে ঢাকা থেকে বিদায় নেয়ার পর পিটার হাসের আবার বাংলাদেশে আগমন। এবং সে আগমনের সময়সন্ধিতে কক্সবাজারে এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক- এটিকে নিছক কাকতালীয় বলে মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এমন এক সময়, যখন ১/১১-সদৃশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন মহলের পরামর্শদাতা তথ্য উপদেষ্টা মহফুজ আলম, এমনকি এবি পার্টির সভাপতি মানজু পর্যন্ত।
কারা এ এনসিপি?
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি— সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। টিআইবি একে ‘কিংস পার্টি’ বলে অভিহিত করেছে— একদল প্রশাসনিক সুবিধাপ্রাপ্ত রাজনৈতিক মুখ, যারা মূলত নির্বাচনকে ‘যন্ত্রণা’ থেকে রক্ষা করে তল্পিবাহক রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, তবু প্রভাব ও প্রচারের অভাব নেই।
তাদের সঙ্গে যদি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ‘ছায়া সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে, তাহলে তা শুধু রাজনৈতিক নৈতিকতার প্রশ্নই তোলে না, বরং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আরও পড়ুন<<>> ভুল অব্যাহত রাখলে ফের ওয়ান ইলেভেন: এবি পার্টি
২০২৪ সালের জুলাই মাসেই দেশে ঘটেছিল একটি নীরব কিন্তু গভীর রাজনৈতিক মোড়। বেশিরভাগ দল নির্বাচন বর্জন করে। সমঝোতার ছায়ায় কিছু দল নাটকীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই সময়ই অনেকে বলেছিলেন,‘গাদ্দারির সূচনা হয়েছে’। এবার জুলাই মাসেই সে কথা আবার ফিরে এলো। কক্সবাজারের গোপন বৈঠক যেন সে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র প্রমাণ হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে।
এবার প্রশ্ন: নির্বাচন, নাকি ভিন্ন কিছু?
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম যেমন বলেছিলেন— ‘১/১১-এর দিকে যাচ্ছে দেশ’, ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষও এখন দ্বিধায়- আদৌ নির্বাচন হবে তো? নাকি আবারও একদল প্রশাসনিক মুখ ও বিদেশি কৌশলের জোটে গণতন্ত্রকে তালাবদ্ধ করে দেয়া হবে?
বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে যে প্রতিবারই গণতন্ত্রকে নানাভাবে আক্রমণ করা হয়েছে— কখনও ছদ্মবেশে, কখনও সরাসরি সেনাশাসনের মাধ্যমে— সেই ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এ বৈঠক, এ গোপন সফর, এ অস্বীকার এবং এ 'ঘুরতে যাওয়ার' ছুতো।
নির্বাচনই কি বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র পথ? নাকি পেছনের দরজা আবার খোলা হয়েছে? ড. ইউনূস আজ কী বলেন, সেটির দিকেই চেয়ে আছেন পুরো জাতি। কিন্তু তার আগেই কক্সবাজারের এ নাটকীয়তা বলে দিচ্ছে, রাজনীতির পেছনের মঞ্চে অনেক বড় কিছুর রিহার্সেল চলছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।