
আটলান্টিক মহাসাগরের জেগে ওঠা এক দ্বীপে তৈরি হয়েছে একটাই বাড়ি—মেসি ম্যানশনছবি: অ্যামেজিং আর্কিটেকচার
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামিতে মেসির ম্যানশন। ফ্লোরিডার মায়ামি বিচ থেকে খানিকটা দূরে আটলান্টিক মহাসাগরে জেগে ওঠা জাহাজ আকৃতির ছোট একটা দ্বীপ। আনুমানিক ৫০ মিলিয়ন ডলার বা ৬১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা দিয়ে বিলাসবহুল একটি বাড়িসহ আস্ত দ্বীপটিই কিনেছিলেন মেসি।
সেখানেই নতুন করে মেসির প্রতিষ্ঠানের লোগোর অনুকরণে তৈরি হয়েছে বিলাসবহুল মেসি ম্যানশন। বাড়িটি দেখতে ইংরেজি বড় হাতের ‘এম’ আকৃতির (মেসির নামের আদ্যাক্ষর)।
ফিউচারিস্টিক ধাঁচের ৩ তলা (৮০ ফুট বা ৮ তলা উচ্চতার সমান) ম্যানশনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে লাক্সারি ম্যানশন। তবে এখানে মেসির পরিবার পাকাপাকিভাবে থাকে না; মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসে। এ ম্যানশন অনেকটা তাদের পারিবারিক অবকাশযাপনকেন্দ্র বা হলিডে হোম।
লিওনেল মেসিকে আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তিনি বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন। বার্সার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে মেসিকেও বদলি চাকরির মতো ক্লাব বদলাতে হয়েছে।
ফ্রান্সের পিএসজির হয়ে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির ঠিকানা এখন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামি। বাবার চাকরি বদলালে যেমন সবাইকে নতুন কর্মস্থলে চলে যেতে হয়। মেসির পরিবারও তেমনি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়।
মেসি স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো ও তিন পুত্রসন্তান নিয়ে সুখের সংসার পেতেছেন ফ্লোরিডার মায়ামি সাগরপাড়ে। থাকছেন পোর্শে ডিজাইন টাওয়ারে। প্রায়ই মেসি সপরিবার থাকেন দ্বীপে, নিজেদের ম্যানশনে। এ ম্যানশনই এ লেখার মূল নায়ক।
১/৩
২০২৩ সালের আগস্টে ইনস্টাগ্রামে মেসির বাড়ির থ্রি–ডি নকশা প্রকাশ করেন মায়ামি বেজড কিউবান স্থপতি ও অন্দরসজ্জাবিদ জর্জ লুইস ভেলিজ কুইন্তানা। তিনি সাগরে জেগে ওঠা দ্বীপ, পানির ভেতরে ও পানির নিচে নানা স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। তিনিই মেসি ম্যানশনের নকশাকার ও অন্দরসজ্জাবিদ।
যা যা রয়েছে বাড়িতে
১ / ৭
মেসির বাড়িটি মার্বেল ও কংক্রিটে তৈরি। এ বাড়িতে রয়েছে ২০টি গ্যারেজ। বাড়ির ছাদে হেলিকপ্টার ওঠানামার জন্য রয়েছে ৩টি হেলিপ্যাড। সব কটি রুম আর ড্রয়িংরুম থেকে দেখা যাবে সমুদ্র।
একটা ঘরে সাদা অক্ষরে লেখা মেসি। রয়েছে অতিথিদের ঘর, হোম থিয়েটার, পুল, জিম। ঘরের ভেতরে আর বাইরে—দুই জায়গাতেই রয়েছে বেশ কয়েকটি পুল। বাড়ির আলোকসজ্জা ও অন্দরসজ্জার নানা ক্ষেত্রে উঠে এসেছে ফুটবল আকৃতির নকশা।
বাড়িটির পেছনে রয়েছে ফুটবল খেলার মাঠ। সেখানে মেসি তিন পুত্র থিয়াগো, মাতেও ও চিরোর সঙ্গে ফুটবল খেলেন। দ্বীপে এ একটি বাড়িই আছে। তাই প্রাইভেসি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয় না মেসির পরিবারকে।
১ / ৪
ইনস্টাগ্রামে মেসির এ বাড়ির নকশা সম্পর্কে ধারণা দিতে জর্জ লুইস লেখেন, ‘মেসি ম্যানশনের নকশা মেসির ব্র্যান্ডের লোগো থেকে অনুপ্রাণিত। তাই বাড়িটি দেখতে “এম” আকৃতির। রাজকীয় ফিউচারিস্টিক বাড়িটি তিনতলা।
রয়েছে ভিডিও গেম খেলার আলাদা ঘর। পার্টির জন্য আলাদা জায়গা। আরামদায়ক, বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু কল্পনা করা কঠিন। বাড়ির বাইরে রয়েছে বিশাল একটি সুইমিংপুল। বাড়ির যেকোনো জায়গা থেকে উপভোগ করা যাবে মায়ামির সামুদ্রিক পরিবেশ ও আবহাওয়া।
বাড়ির সামনে সাগরে রয়েছে মেসির ব্যক্তিগত ইয়ট। সেটাতে মেসির পরিবার যেকোনো সময় সমুদ্রভ্রমণে বের হতে পারে। মেসি ম্যানশনে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইয়ট ছাড়াও রয়েছে স্পিডবোট ও আধুনিক নৌকা।
ক্লাব থেকে উপহারের ফ্ল্যাট
ইউরোপের ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে মেসি পাকাপাকিভাবে পরিবার নিয়ে উড়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। মেসি কোথায় থাকবেন, সে ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিল ডেভিড বেকহামের সহমালিকানাধীন ক্লাব ইন্টার মায়ামি।
ফ্লোরিডার পোর্শে ডিজাইন টাওয়ারে মেসির ৩ হাজার ৫৫৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটির দাম ৫ মিলিয়ন ডলার বা ৬১ কোটি টাকা। এ টাওয়ার তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে।
৬০ তলা এ টাওয়ারের উচ্চতা ৬৪১ ফুট। ইন্টার মায়ামি ক্লাবে যোগদানের সময় থেকেই (২০২৩ সালের জুলাই) মেসি এ ফ্ল্যাটে থাকছেন। ফ্ল্যাটটি ক্লাবের পক্ষ থেকে মেসিকে উপহার দেয়া হয়েছে।
মেসির এই ফ্ল্যাটে রয়েছে ৩টি বেডরুম, ৪টি বাথরুম, ২টি ড্রয়িংরুম ও ২টি বারান্দা। জিম, স্পা, স্কাইগ্যারাজসহ জীবনযাপনের সব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে মায়ামির এই বহুতল ভবনে। যেখানে গাড়ির জন্য রয়েছে বিশেষ লিফট। এ লিফটের নাম ‘ডেজারভেটর’।
প্রতিটি ফ্ল্যাটের সঙ্গে রয়েছে গাড়ি রাখার আলাদা জায়গা। লিফটে করে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে নিজের ফ্ল্যাটে। মেসি চাইলে তার গাড়ি রাখতে পারবেন ফ্ল্যাটের ভেতরেই। ফ্ল্যাট থেকেই গাড়িতে উঠে রাস্তায় বেরিয়ে যেতে পারেন ৭ বারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী। মেক্সিকান বিলিয়নিয়ার কার্লোস পেরাল্টা কুইন্টেরো ও পুয়ের্তোরিকান র৵াপার অ্যানুয়েল এ বিল্ডিংয়েই থাকেন।
এ ছাড়া আর্জেন্টিনার রোজারিও, স্পেনের বার্সেলনার ক্যাসটেলল্ডিফেলস ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলের অভিজাত এলাকা বে কলোনির গেটেড কমিউনিটিতেও বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে মেসির। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে অন্তত ৫টি বাড়ি রয়েছে মেসির, যার ৩টিই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়: সূত্র: জিকিউ, হাউজিং ও ফোর্বস
আপন দেশ/এমবি