ছবি: আপন দেশ
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এলাকায় অবস্থিত সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) সেন্টারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সেবা গ্রহীতাদের প্রতি আচরণ অসৌজন্যমূলক বলে অভিযোগ করেছেন বাকৃবির একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও রোগীর অভিভাবক।
জানা যায়, বাকৃবিতে অবস্থিত সিআরপি সেন্টারটি ২০১৭ সালে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নদের পাড়ের একটি একতলা ভবন সিআরপিকে ব্যবহারের অনুমতি দেয় বাকৃবি। চুক্তি অনুযায়ী সিআরপি সেন্টারটি ২৫০০ বর্গফুটের জন্য প্রতি বছরে মাত্র ১০০ টাকা ভাড়া প্রদান করে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওই সেন্টারে কর্মরত স্টাফদের আচরণ অসৌজন্যমূলক বলে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া শিশু থেরাপি সেবা নিয়ে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, নিয়মিত থেরাপিস্ট পরিবর্তন, সময় সংকোচন ও অপেশাদার আচরণের কারণে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে সেন্টারটির ম্যানেজার রাফিউল করিমের সাথেও যোগাযোগ করা হয়।
আরও পড়ুন<<>>রাবি প্রেসক্লাবের বর্ষসেরা রিপোর্টার হলেন আপন দেশ- এর রাফাসান আলম
বাকৃবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল হাসান ভূঞা বলেন, আমার আত্মীয় এক কৃষক রোগীর জন্য ছাড়ের আবেদন করতে গিয়ে বাকৃবি সিআরপির এক স্টাফের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়েছে। ওই সেন্টারের দায়িত্বে থাকা রাফিউল করিমকে সাদা কাগজে দরখাস্ত দেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান তেমনটি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের নির্ধারিত ফরমেই সেটি করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করেছেন বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু ইউনুস নামের ওই স্টাফ আমি কোন গ্রেডের প্রফেসর ইত্যাদি প্রশ্ন করে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাকে।
ম্যানেজার রাফিউল অধ্যাপক খায়রুলের অভিযোগের ব্যাপারে বলেন, বাকৃবির সাথে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেশন ফি'র ২৫ শতাংশ ছাড় পাবেন কিন্তু কোনো অধ্যাপকের আর্থিক সমস্যা থাকলে আমাদের জানাতে হবে। আর আমরা মোট ৬টি ক্যাটাগরিতে ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছি এবং মাসে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকি। ইউনুস এখানে তিন মাস হয় জয়েন করেছে। অধ্যাপক খায়রুল মঙ্গলবার এসেছিল এবং ইউনুস বুধবার পর্যন্ত ছুটিতে ছিলো তাই সে দরখাস্তের বিষয়টি না জেনেই অধ্যাপকের সাথে বাজে আচরণ করে ফেলেছে।
অধ্যাপক খায়রুল আরও অভিযোগ করেন, আমি একজন অধ্যাপক হয়েই যে ব্যবহার পেয়েছি সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের প্রতি তারা না জানি কি ব্যবহার করে। এ অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ম্যানেজার বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন সকালে সিআরপির ৬টি মূলমন্ত্র নিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিটের একটি মিটিং করা হয়। আমরা সকল রোগীদেরই সমানভাবে মূল্যায়ন করি। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পরে আমাদের নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে আড়াইগুণ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাকৃবি সিআরপির একটি সূত্র ম্যানেজারের এ বক্তব্যের ব্যাপারে বলেন, দুই সপ্তাহ থেকে এ কোর ভ্যালু মিটিং শুরু হয়েছে। ফেসবুকে এক রোগীর আত্মীয় অভিযোগ বিষয়ে পোস্ট করলে ম্যানেজার খুবই ফালতু যুক্তি দেখিয়েছে। ম্যানেজারের এমন কর্মকাণ্ড সিআরপির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরের নজরের আসলে তিনি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেন এবং এরপর থেকেই মূলত ওই মিটিং শুরু হয়।
এছাড়া বাকৃবির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, থেরাপির বিষয়ে জানতে চাইলে আমার ও আমার পরিবারের সঙ্গে বাকৃবি সিআরপির স্টাফরা দুর্ব্যবহার করলেও ম্যানেজার স্টাফদের পক্ষেই কথা বলেছেন। আমার মা এখানে থেরাপি নেয়। আমার মা অভিযোগ করেন তার থেরাপির সময় থেরাপিস্ট তাকে অনেক সময় ধাক্কা দেয়।
অন্যদিকে, এক নারী অভিভাবক বলেন, আমার ছেলের থেরাপিস্ট পরিবর্তন করা হয় আমাকে না জানিয়েই। ৪৫ মিনিটের সেশন বলা হলেও, অনেক সময় মাত্র ২০ মিনিট পাওয়া যায়। এমনকি আমি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করলে, প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন আমাকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে অপমান করেন। এ অভিযোগের ব্যাপারে ম্যানেজার রাফিউল করিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নজরে আসার পর বাকৃবি সিআরপির স্টাফসহ আমি নিজে ফেসবুকে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। সেই সাথে একটি সেশনের দৈর্ঘ্য কত সময়ের জন্য হবে এ বিষয়টি পুরোপুরি টাকার পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
অভিভাবকরা দাবি জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ সিআরপি ব্যবস্থাপনা এসব অভিযোগ শুনতে আগ্রহী নয়। কেউ কথা বলতে গেলে ম্যানেজারের আচরণ হয় রূঢ়। তারা চান, রেসিডেন্সিয়াল থেরাপিস্টের অধীনে স্থিতিশীল থেরাপি চালু করা হোক এবং ইন্টার্নদের রোটেশন অন্তত ছয় মাস অন্তর করা হোক।
আপন দেশ/এসআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































