ফাইল ছবি
দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর পথে হাঁটছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্র করে তার ওপরে মূল্যায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি।
প্রস্তাব অনুযায়ী—নতুন এ কাঠামো অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানপ্রধান (অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক) বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। এরপর শূন্যপদ জানিয়ে তার বিপরীতে আবেদন গ্রহণ করবে। যারা আবেদন করবেন, তাদেরকে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে এসব পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আগের তুলনায় আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অনিয়মমুক্ত হবে।
আরও পড়ুন<<>>এইচএসসির খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানান, বেসরকারি স্কুল-কলেজ পরিচালনায় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের প্রস্তাবনা অনুযায়ী এ পদে কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। এর ফলে প্রার্থীদের প্রকৃত যোগ্যতা যাচাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। এ পরিস্থিতি এড়াতে লিখিত বা এমসিকিউ টাইপের ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি। এ পরীক্ষা লিখিত হবে নাকি শুধুই এমসিকিউ পদ্ধতিতে হবে, তা চূড়ান্ত করবে এনটিআরসিএর বোর্ড।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক-২ শাখার অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের দফতরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন মিললে চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়োগ দেয়া হতো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির (ম্যানেজিং কমিটি) মাধ্যমে। তবে এ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেন, রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি ও নানান অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইচ্ছানুযায়ী অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ঘটনাও ঘটতো অহরহ। এসব অনিয়ম বন্ধে এবং দক্ষ প্রশাসনিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
গত ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, সহকারী প্রধান, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও সমমানের সব পদে নিয়োগ দেয়া হবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে। এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত।
এর আগে ০৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন প্রতিষ্ঠানপ্রধান বা অধ্যক্ষ পুরো প্রতিষ্ঠানের নীতি ও মান নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই মেধাভিত্তিক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব গড়েই দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়োগ দেয়ার নিয়মে পরিবর্তন আনছে।
যেমন হতে পারে পরীক্ষা পদ্ধতি
এনটিআরসিএ ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন পদ্ধতির কাঠামো এখনও চূড়ান্ত করেনি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা ও প্রার্থীর পূর্ব অভিজ্ঞতা মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ যাচাইয়ের একটি প্রক্রিয়া তৈরি করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এনটিআরসিএর বোর্ড।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগে মেধাভিত্তিক পদ্ধতি চালু হলে বেসরকারি স্কুল-কলেজের নেতৃত্বের মান বাড়বে। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রশাসনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।
আপন দেশ/এসআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































