Apan Desh | আপন দেশ

জাতীয় নির্বাচনের দিনে চার প্রশ্নের গণভোট

বিশেষ রাজনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৪:৫১, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনের দিনে চার প্রশ্নের গণভোট

ছবি: আপন দেশ

রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিনই গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এবার প্রচলিত কাঠামো ভেঙে একটির পরিবর্তে চারটি প্রশ্নে হ্যাঁ বা না ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। সরকারের লক্ষ্য- সব পক্ষের মতামত বিবেচনায় ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজন নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এতে উপদেষ্টারা এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অংশ নিয়েছেন। আলোচনায় উঠে এসেছে- জাতীয় নির্বাচনের আগে আলাদা করে গণভোট আয়োজনের সময় ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল নয়। তাই ভোট গ্রহণের দিন একইসঙ্গে গণভোট আয়োজনের দিকেই এগোচ্ছে সরকার।

প্রচলিত গণভোটে সাধারণত একটি প্রশ্নে জনগণ হ্যাঁ বা না ভোট দেয়। এবার চারটি প্রশ্ন রাখার প্রস্তাব এসেছে। প্রথম প্রশ্ন হবে- যেসব বিষয়ে সবদল একমত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা হবে কি না। দ্বিতীয় প্রশ্নে আসবে নির্বাচনী ব্যবস্থায় পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি প্রবর্তনের বিষয়ে মতামত। তৃতীয় প্রশ্নে থাকবে- ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জনগণের মতামত। আর চতুর্থ প্রশ্নে থাকবে- ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছাড়া সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান।

আরও পড়ুন<<>> রাজনীতি টানটান, সময় গুনছে দেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরে আলোচনা চলছে। আমরা চাই না, কোনো পক্ষের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ উঠুক। সরকারের সিদ্ধান্ত হবে ভারসাম্যপূর্ণ এবং বাস্তবমুখী। সূত্রমতে, আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে স্বাক্ষর করতে পারেন বলে জানা গেছে।

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সব দলের প্রত্যাশার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে। দেশের স্বার্থে যে পদক্ষেপ প্রয়োজন, সেটাই নেয়া হবে।

তবে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সরকারের চূড়ান্ত অবস্থান সম্পর্কে অবগত নয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- জাতীয় নির্বাচনের আগে আলাদা করে গণভোট আয়োজনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাদের মতে, একই দিনে ছোট একটি ব্যালটে গণভোটের আয়োজনই হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও কম ব্যয়সাপেক্ষ। বিএনপি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যদি এমনভাবে গণভোট নেয় যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়, তাহলে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলাম কঠোর অবস্থানে থেকে সরকারকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দফা দাবি মানার আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

জুলাই সনদের অপর স্টেকহোল্ডার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে এবং বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছে। ছোট দলগুলো বড় দলের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করছে; তাদের পক্ষ থেকে আলাদা কোনো মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকার একদিকে দলগুলোর চাপ সামলাতে চাইছে, অন্যদিকে সুশাসন ও সংস্কারের রূপরেখা বাস্তবায়নেও আগ্রহী। তাই সবদিক বিবেচনায় ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানই এখন সরকারের অগ্রাধিকার।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, চারটি প্রশ্নে গণভোটের বিষয়টি নতুন। সরকারকে খুবই সতর্কতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। দলগুলো এটি কীভাবে নেয়, তা কয়েক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হবে।

জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত এ অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই রাজনৈতিক সংস্কার ও প্রশাসনিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। সুশাসন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন রোধের উদ্দেশ্যে সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

আরও পড়ুন<<>> দরিদ্র মজিবুর এখন হাজার কোটির টাকার মহারাজা

কমিশনটি ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপের পর সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করে। ৮৪টি প্রস্তাবনাসম্পন্ন এ সনদে ইতোমধ্যে ২৬টি দল ও জোট স্বাক্ষর করেছে এবং সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার জানিয়েছে।

সরকারের আশা, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলো শেষ পর্যন্ত মেনে নেবে। তবে সিদ্ধান্ত এমন হতে হবে, যাতে কোনো পক্ষই নিজেদের বঞ্চিত মনে না করে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন ও তাতে চারটি প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ সরকারের জন্য একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অন্যদিকে একটি সাহসী ও সমন্বিত উদ্যোগ। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলো এ সিদ্ধান্তে কী প্রতিক্রিয়া জানায় এবং এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংস্কারের পথে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ
SS Power

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়