Apan Desh | আপন দেশ

জিপিএ-৫ পেল দর্জির মেয়ে কারিমা, ভর্তি নিয়ে শঙ্কা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৫০, ১৩ মে ২০২৪

জিপিএ-৫ পেল দর্জির মেয়ে কারিমা, ভর্তি নিয়ে শঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

বাবা পেশায় একজন দর্জি। মা হলেন গৃহিণী। অভাব অনটনের সংসার। সামান্য আয়ের সংসার হওয়ায় ঠিক মতো সন্তানের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অদম্য ইচ্ছের কাছে দারিদ্র্যতা যে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তার বাস্তব প্রমাণ দেখিয়ে দিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী কারিমা আক্তার।

অভাব অনটনকে জয় করে এবার এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কারিমা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার নাছরিন নবী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়।

কারিমা আক্তার পৌর শহরের মসজিদপাড়া এলাকার মোহাম্মদ কবির হোসেনের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে কারিমা সবার বড়। পড়ালেখার প্রতি তীব্র আগ্রহ থাকায় দারিদ্রতা তাকে ধামিয়ে রাখতে পারেনি। তার এ সাফল্য মা বাবা শিক্ষকসহ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে।

জানা গেছে, কারিমার বাবা মোহাম্মদ কবির হোসেন একজন কর্মঠ মানুষ। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় দীর্ঘ বছর ধরে নিজ বসতঘরে দর্জির কাজ করছেন। এ কাজের মাধ্যমে যে আয় হয় তা দিয়ে চলছে তার সংসার। তবে শত কষ্টের মাঝে সন্তানের পড়াশুনা করানো থেকে তিনি মুখ ফেরাননি। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে রাত দিন পরিশ্রম করছেন।  

অদম্য মেধাবী কারিমা আক্তার জানায়, ছোটবেলা থেকেই অনেক অভাব আর কষ্টের মধ্যে লেখাপড়া করেছি। বাবা দিনরাত পরিশ্রম করে সংসার এবং আমার পড়াশুনার খরচ জুগিয়েছেন। যখন যেটা চেয়েছি কষ্ট করে হলেও বাবা তা পূরণের চেষ্টা করেছেন। বাবা মায়ের প্রচেষ্ঠা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা এবং নিজের ইচ্ছেতেই আজ ভালো ফলাফল করেছি। তারা যদি আমার পাশে না থাকতো হয়তো এ ফলাফল করতে পারতাম না। আমার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার। এজন্য সবার কাছে দোয়া চাই। ডাক্তার হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারি।

আরও পড়ুন>> হুমায়ূনের স্কুলে একজন ছাড়া সবাই পেল জিপিএ-৫

কারিমার মা আফিয়া আক্তার বলেন, বাড়ির সামান্য জায়গা ছাড়া অন্য কোনো জায়গা জমি নেই। খুবই কষ্ট করে ছোট একটি ঘরে আমাদের থাকতে হচ্ছে। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় মেয়ে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। অনেক সময় না খেয়েও স্কুলে যেতে হয়েছে। ঠিকমতো খাতা-কলমও দিতে পারিনি। মেয়ের এ ফলাফলে আমরা খুবই খুশি। তবে অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় কলেজে ভর্তি কীভাবে করবো, কীভাবে ওর পড়াশুনার খরচ যোগাড় করবো, তা নিয়ে এখন চিন্তিত হয়ে আছি।

এদিকে মেয়ের ভালো ফলাফলে খুশি হলেও উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তিত বাবা মোহাম্মদ কবির হোসেন। 

তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্নই দেখি তবে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে দারিদ্রতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার উচ্চশিক্ষাসহ লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারবো কিনা, তা নিয়ে এখন দুঃশ্চিন্তায় আছি।

আখাউড়া নাছরিন নবী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত বণিক বলেন, কারিমা আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই বেশ মেধাবী। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতো। পড়াশুনার প্রতি যথেষ্ঠ মনোযোগী। আমরা সবসময় তাকে সহযোগিতা করেছি। তাছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষায় সে মেধার পরিচয় দিয়েছে। সে এ বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। 

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়